মানসিক স্বাস্থ্য: ভালো থাকতে খাবারের ভূমিকা
আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য খুবই জরুরি। মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে, আর শরীর ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে।
সেরোটোনিন নামক একটি হরমোন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই হরমোনটি আমাদের মুড বা মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেরোটোনিনের অভাবে মন খারাপ লাগা, বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের মতো সমস্যা হতে পারে।
সেরোটোনিন তৈরি হওয়ার জন্য ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন। শরীরে ট্রিপটোফ্যান সরবরাহ করতে পারে এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
আসুন সেরকম কয়েকটি খাবারের কথা জেনে নিই:
ডিম: ডিমে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফ্যান থাকে। বিশেষ করে ডিমের কুসুমে এই উপাদান বেশি পাওয়া যায়। তাই ডিম নিয়মিত খেলে তা সেরোটোনিন তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
পনির: বিভিন্ন ধরণের পনির, বিশেষ করে যাদের স্বাদ খানিকটা শক্ত, যেমন – সুইস, পারমিজান, গৌডা, বা চেডার – এগুলি ট্রিপটোফ্যানের ভালো উৎস। বাজারে সহজলভ্য পনিরও ট্রিপটোফ্যানের একটি ভালো উৎস হতে পারে।
সয়াবিন পণ্য: টোফু বা সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার ট্রিপটোফ্যানের একটি চমৎকার উৎস। যারা নিরামিষ খান, তাদের জন্য এটি প্রোটিনের একটি ভালো বিকল্প। বর্তমানে বাজারে টোফু বেশ সহজলভ্য।
স্যামন মাছ: স্যামন মাছে ট্রিপটোফ্যানের পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি-ও পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
বাদাম ও বীজ: সব ধরনের বাদাম ও বীজে ট্রিপটোফ্যান থাকে। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কুমড়োর বীজ ইত্যাদি নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়।
মুরগি বা টার্কি: টার্কি মাংস ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ। টার্কি সহজলভ্য না হলেও মুরগির মাংস এক্ষেত্রে ভালো বিকল্প হতে পারে। মাংস শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ করে।
কার্বোহাইড্রেট ও সেরোটোনিন: ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সময় সামান্য কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেট শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ করে, যা ট্রিপটোফ্যানকে ভালোভাবে শোষণে সাহায্য করে।
অন্যান্য উপায়: শুধু খাবারই নয়, আরও কিছু উপায়ে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো এবং প্রোবায়োটিক গ্রহণ সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।
সতর্কতা: কোনো খাদ্যতালিকাই মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার বিকল্প নয়। যদি আপনার মন খারাপ থাকে বা বিষণ্ণতা অনুভব করেন, তবে অবশ্যই একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত ট্রিপটোফ্যান গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে, খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার: সেরোটোনিন আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করে। ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা সেরোটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হতে পারে।
তবে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন