মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র দুর্বল হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে, দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ বিভিন্ন দেশে ক্ষমতা সংহত করতে চাওয়া নেতাদের কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার হুগো চাভেজ, তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবানের মতো নেতাদের কার্যকলাপের সঙ্গে ট্রাম্পের কিছু কাজের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প সম্ভবত অন্যদের চেয়ে দ্রুত এবং আরও স্পষ্টভাবে কাজ করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছামতো কাজে লাগাতে ফেডারেল সরকারের পুনর্গঠন করেছেন। সমালোচকদের দমন করতে এবং ভিন্নমতকে স্তব্ধ করতে তিনি সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। ট্রাম্পের এমন কিছু পদক্ষেপের কারণে আমেরিকায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প তার সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলোর লাইসেন্স বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের লক্ষ্যবস্তু বানাতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছেন। এমনকি, তিনি নির্বাচিত কর্মকর্তাদের প্রতি আনুগত্যের অভাবের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদেরও বরখাস্ত করেছেন। ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেওয়া এবং ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে সেনা পাঠানোর মতো পদক্ষেপগুলোও উদ্বেগের কারণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডেভিড স্মাইল্ডের মতে, ট্রাম্পের ক্ষমতা দখলের গতি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, “একমাত্র পার্থক্য হলো, এটি কত দ্রুত ঘটছে।
অন্যদিকে, তুরস্কের একজন বিশেষজ্ঞ আল্পার কোস্কুন মনে করেন, ট্রাম্প যেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পথ অনুসরণ করছেন। এরদোগান দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। কোস্কুন বলেন, “মনে হচ্ছে, আমেরিকা ধীরে ধীরে তুরস্কের পথে হাঁটছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এখনও শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধরে রেখেছে। এখানে ট্রাম্পের বিরোধিতা করার মতো শক্তিশালী বিরোধী দল রয়েছে এবং বিচার বিভাগও তার অনেক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তা সত্ত্বেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের কার্যকলাপ আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন লেভিটস্কি বলেন, “অন্যান্য দেশের মানুষজন কর্তৃত্ববাদের বিপদ সম্পর্কে বেশি সচেতন। তারা গণতন্ত্র হারানোর ঝুঁকি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র, গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস