প্রকাশ্যে বাল্যবিবাহের বীভৎস চিত্র! মেয়েদের জীবনে নেমে আসা ঝড়!

বাংলার সমাজে বাল্যবিবাহ: একটি লুকানো বাস্তবতার চিত্র।

বাল্যবিবাহ আজও বাংলাদেশের একটি গুরুতর সমস্যা, যা মেয়ে শিশুদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়ে শিশুদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েরা কিভাবে নির্যাতনের শিকার হয়, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য হয়। এই সমস্যা সমাধানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সামাজিক সচেতনতা জরুরি।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি মেয়ের বাস্তব জীবনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার নাম রেহানা। ১৪ বছর বয়সে রেহানার বিয়ে হয় এবং ১৫ বছর বয়সে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

রেহানা জানান, বিয়ের পর তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করত।

রেহানার মা, ফরিদা, মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, তিনি ভুল করেছেন।

মেয়ের কষ্ট দেখে তিনি বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও সমাজে এই বিষয়ে অনেক কুসংস্কার ছিল, তবুও তিনি মেয়ের পাশে ছিলেন।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, সামাজিক চাপ এবং শিক্ষার অভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, মেয়েরা পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য অথবা দ্রুত একটি আশ্রয় পাওয়ার আশায় বাল্যবিবাহের শিকার হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া মেয়েদের মধ্যে অনেকেই তাদের স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হয়। তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং অল্প বয়সেই মা হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।

বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। মেয়ে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে, তাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাল্যবিবাহ একটি জটিল সমস্যা, যা শুধু আইন করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, মেয়ে শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।

ইউনিসেফ-এর এক কর্মকর্তা জানান, বাল্যবিবাহ মেয়ে শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এর ফলে তারা সহিংসতা, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়।

বাল্যবিবাহ নিরসনে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) কাজ করছে। তারা মেয়ে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

তবে, এই সমস্যা সমাধানে সমাজের সকল মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি, যা আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দেয়। আসুন, আমরা সবাই মিলে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই এবং মেয়ে শিশুদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *