সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদ: আমেরিকার তরুণদের পাচার চক্রে ভেড়ানোর কৌশল
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে সবকিছুই হাতের মুঠোয়, তেমনইভাবে অপরাধ জগতও বিস্তার লাভ করেছে অনলাইন জগতে। মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক কারবারিরা এখন তরুণ আমেরিকানদের পাচার ও মাদক ব্যবসার কাজে লাগানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি, সিএনএন-এর এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে “সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জনের” লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে ফাঁদ পাতা হচ্ছে। অল্প বয়সী, বিশেষ করে আর্থিক অনটনে থাকা তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করা হচ্ছে। তাদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে দ্রুত কিছু টাকা রোজগারের, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।
উদাহরণস্বরূপ, ফিনিক্সের (Phoenix) এক তরুণীর কথা বলা যায়। তিনি সিএনএন-কে জানান, কীভাবে তিনি এক রাত্রে স্ন্যাপচ্যাটে আসা একটি পোস্টের মাধ্যমে এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
চাকরির প্রস্তাব ছিল, দিনে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা) উপার্জনের সুযোগ। প্রথমে তিনি বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পারেননি, কিন্তু দ্রুত টাকার হাতছানি তাকে এই পথে আকৃষ্ট করে।
এই চক্রগুলি সাধারণত “ড্রাইভার” বা “কাজের লোক” নিয়োগ করে থাকে, যাদের মূল কাজ হল সীমান্ত পার হয়ে আসা অভিবাসীদের আনা-নেওয়া করা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় গোপন ভাষা এবং ইমোজি।
যা কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে সহজে কর্মী নিয়োগ করতে সাহায্য করে।
এই চক্রের সদস্যরা যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মতো এনক্রিপ্টেড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, যা তাদের কার্যকলাপকে আরও গোপন রাখে। একবার কর্মী নিয়োগ হয়ে গেলে, তাদের নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলা হয় এবং সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া লোকজনকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হয়।
তবে, এই কাজগুলো যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়। অনেক সময়, এই কাজে জড়িত তরুণ-তরুণীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং তাদের দীর্ঘ কারাদণ্ড হয়। সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র অ্যারিজোনাতেই গত ছয় মাসে ৪৩১ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনার সাথে জড়িত সিনালোয়া কার্টেলের (Sinaloa Cartel) এক শীর্ষস্থানীয় সদস্য সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে তাদের কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে, কিন্তু তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা এই ধরনের কাজে যুক্ত হতে চায়, তাদের ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যারিজোনার সিনেটর মার্ক কেলি (Mark Kelly) এবং অন্যান্য আইনপ্রণেতারা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে কার্টেলদের কার্যকলাপ বন্ধের জন্য একটি বিল উত্থাপন করেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এটি সিনেট বা প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (Drug Enforcement Agency) সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিলে ক্ষতিকর অ্যাকাউন্টগুলো চিহ্নিত ও বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে তাদের এই কাজে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বর্তমানে, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার খরচ বেড়ে যাওয়ায়, পাচারকারীদের জন্য ড্রাইভারদের বেতনও বেড়েছে। ফলে, তরুণ প্রজন্মের কাছে এই কাজগুলো আরও লোভনীয় হয়ে উঠছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, তরুণদের সচেতন থাকা জরুরি। সামান্য লোভের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল পথে পা বাড়ানো উচিত নয়। কারণ, এর ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী এবং ভয়ংকর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন