মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য সরকারি অচলাবস্থা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে অচলাবস্থা একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ফেলতে পারে নানা প্রভাব। সাধারণত, এমন পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজার বা অর্থনীতির ওপর তেমন বড় ধরনের প্রভাব পড়ে না।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার অচলাবস্থা হলে এর মানে হলো, ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে, সরকারি কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।
অতীতে দেখা গেছে, এমন অচলাবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয় এবং এর অর্থনৈতিক ক্ষতিও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়। যেমন, ২০১৮-১৯ সালের দীর্ঘ ৩৫ দিনের অচলাবস্থাতেও মার্কিন অর্থনীতি ও আর্থিক বাজারে তেমন কোনো দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েনি।
সাধারণত, অচলাবস্থার কারণে প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP) ০.২ শতাংশ হারে কমে যায়।
তবে, সরকার পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ক্ষতি পূরণ হয়ে যায়।
কিন্তু এবার শঙ্কাটা অন্য জায়গায়। অতীতের অচলাবস্থাগুলোতে কর্মীদের পুনরায় কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল।
এবার শোনা যাচ্ছে, কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমনটা ঘটলে অর্থনীতির জন্য তা হবে অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ।
অর্থনীতিবিদ স্টেফানি রথ বলেছেন, কর্মীদের স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হলে তা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জ্যারেড বার্নস্টাইন মনে করেন, এটা শুধু খারাপ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তই নয়, বরং অত্যন্ত অন্যায়ও বটে।
এই অচলাবস্থার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হতে পারে, যা নীতিনির্ধারক এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।
উদাহরণস্বরূপ, শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (Bureau of Labor Statistics) তাদের গুরুত্বপূর্ণ মাসিক চাকরির হিসাব প্রকাশ করতে পারবে না। এই ধরনের তথ্য বাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে ইতোমধ্যে শ্রমিকের চাহিদা কমে গেছে, তাই তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতে পারে।
শেয়ার বাজারের চিত্র
সাধারণত, সরকারে অচলাবস্থা শেয়ার বাজারের জন্য তেমন উদ্বেগের কারণ হয় না। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে সরকারে অচলাবস্থার সময় এসএন্ডপি ৫০০ সূচকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
এমনকি, ২০১৮ সালের শেষ দিকে হওয়া অচলাবস্থায় বাজারের সূচক ১০ শতাংশ বেড়েছিল।
তবে, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, কর্মী ছাঁটাইয়ের হুমকি এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্বের কারণে বাজারের অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
কারণ, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
যদি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সেই প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে সরকারে অচলাবস্থা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।
তাই, এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন