আতঙ্কে তাইওয়ান! রাশিয়া থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের তেল কিনছে?

**তাইওয়ানের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি: তাইওয়ানের জন্য ঝুঁকি বাড়ছে?**

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, তাইওয়ান সম্প্রতি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেলের উপজাত আমদানি করছে, যা তাইওয়ানের জন্য একদিকে যেমন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলে দেশটির ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলছে। যদিও তাইওয়ান ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং মস্কোর ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তারপরেও তাদের এই তেল আমদানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে তাইওয়ান প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ন্যাপথা (পেট্রোলিয়ামজাত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়) আমদানি করেছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য, ২০২২ সাল থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে তাইওয়ান রাশিয়া থেকে প্রায় ৪.৯ বিলিয়ন ডলারের ন্যাপথা আমদানি করেছে।

চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে এবং তাইওয়ানের ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ারও হুমকি দিয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে তাইওয়ানের এই বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি তাইওয়ানের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

রাশিয়া যদি কোনো কারণে তাইওয়ানে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাইওয়ানের শিল্পখাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

জানা গেছে, তাইওয়ানের একটি প্রধান তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ফরমোসা পেট্রোকেমিক্যাল, তাদের ন্যাপথা আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এমনকি তাদের একটি পরিশোধনাগার, যেখানে আগে রাশিয়ার ন্যাপথা ব্যবহার হতো ৯ শতাংশ, সেখানে এখন ৯০ শতাংশ ন্যাপথা রাশিয়া থেকে আসে।

কোম্পানিটি জানাচ্ছে, তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই এই আমদানি করছে এবং ভবিষ্যতে সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা আসলে তা মেনে চলতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে, তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন দলের একজন আইনপ্রণেতা পুমা শেন মনে করেন, রাশিয়ার ওপর তাইওয়ানের এই নির্ভরশীলতা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। কারণ রাশিয়া ও চীনের মধ্যে একটি কৌশলগত জোট বিদ্যমান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনকি রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতের ওপরও তারা শুল্ক আরোপ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সম্প্রতি, তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিন চিয়া-লুং ইউরোপ সফরকালে গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তাইওয়ানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউরোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে তাইওয়ানের এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক তাইওয়ানের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাইওয়ানের উচিত দ্রুত রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প পথ খুঁজে বের করা এবং এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা। ন্যাপথা আমদানি কমিয়ে তারা যেন রাশিয়ার যুদ্ধকে কোনোভাবে সহায়তা না করে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *