আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র! অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুর্বলতা, বাড়ছে অনিশ্চয়তা: বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এখন যেনো দুর্যোগের ঘনঘটা। একদিকে যেমন সরকারি কাজকর্ম অচলাবস্থায়, তেমনি দেশটির নীতিনির্ধারকদের জন্য দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে একের পর এক অর্থনৈতিক সূচকের অভাব। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দেশটির ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স (বিএলএস) সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তাদের নিয়মিত অর্থনৈতিক উপাত্ত প্রকাশ করতে পারছে না। এর ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিতব্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান এবং মূল্যস্ফীতি বিষয়ক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীরা বাজারের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতে সমস্যা অনুভব করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা বিভিন্ন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কঠিন করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অচলাবস্থা আমেরিকার অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর প্রধান কারণ হলো, এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না, ফলে তারা নিয়মিত ডেটা সংগ্রহ করতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে সেপ্টেম্বরের এবং অক্টোবরের কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদনগুলো প্রকাশে দেরি হতে পারে। কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ব্রেট হাউস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সরকারের এই অচলাবস্থা বাণিজ্য যুদ্ধ, সরকারি কর্মীদের ছাঁটাই এবং পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা খর্ব করার মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ এবং কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থার পেছনে দেশটির অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ও দায়ী। এর মধ্যে অন্যতম হলো, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেডারেল রিজার্ভ) স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ। অর্থনীতির এই সংকটকালে ফেডারেল রিজার্ভের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থনীতির এই সংকটকালে বিএলএস প্রধান এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে বরখাস্ত করার পর নতুন প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে জটিলতা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত ই জে এন্টনিকে এই পদে মনোনয়ন দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।

অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ (মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি) দেখা দিতে পারে। কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলাহী মনে করেন, এই অচলাবস্থা শুধু সাময়িক অসুবিধা নয়, বরং এটি একটি পদ্ধতিগত সংকট। এর ফলস্বরূপ, ২০২৬ সালের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই দুর্বলতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির যেকোনো অর্থনৈতিক দুর্বলতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *