শুক্রবার প্রকাশিতব্য চাকরির হিসাব বন্ধ, উদ্বেগে অর্থনীতিবিদরা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থার কারণে অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব, যা নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ সহ বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ডেটা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে।

বুধবার থেকে শুরু হওয়া অচলাবস্থার কারণে শুক্রবার প্রকাশিতব্য মাসিক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হবে। সাধারণত প্রতি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়া বেকারত্বের সুবিধার আবেদন সংক্রান্ত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনও স্থগিত করা হবে।

যদি অচলাবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য হয়, তবে এর প্রভাব তেমন গুরুতর হবে না। তবে কয়েক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে ডেটা প্রকাশে দেরি হলে, বিশেষ করে ফেডারেল রিজার্ভের জন্য তা বেশ উদ্বেগের কারণ হবে। কারণ, মূল্যস্ফীতি তাদের ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে, অথচ কর্মসংস্থান কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। আগস্টে বেকারত্বের হারও বেড়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভ সাধারণত বেকারত্ব বাড়লে সুদের হার কমায়, কিন্তু মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়লে হয় সুদের হার বাড়ায়, না হয় অপরিবর্তিত রাখে। আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবর ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী বৈঠকে তাদের হাতে বিশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত ফেডারেল অর্থনৈতিক তথ্য নাও থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে আবারও সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

কর্মসংস্থান বাজার অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী দিক ছিল, কিন্তু গত কয়েক মাসে এতে উল্লেখযোগ্য মন্দা দেখা যাচ্ছে। এই মন্দা অব্যাহত আছে, বাড়ছে নাকি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে – তা জানা খুবই জরুরি।

বামপন্থী ওয়াশিংটন সেন্টার ফর ইক্যুইটেবল গ্রোথের সিনিয়র ফেলো মাইকেল লিন্ডেন

ফেডারেল রিজার্ভ চলতি মাসের শুরুতে সুদের হার এক চতুর্থাংশ কমিয়েছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা সম্ভবত এ বছর আরও দু’বার সুদের হার কমাতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের গতিবিধির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন, তবে এর জন্য ডেটা পাওয়াটা জরুরি।

আগামী ১৫ অক্টোবর একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি বিষয়ক প্রতিবেদন এবং তার পরের দিন মাসিক খুচরা বিক্রয় সংক্রান্ত সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এই মাসের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব এবং ডেটার দিকে নজর রাখব।

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক চিত্র আরও অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কর্মী নিয়োগ কম হওয়া সত্ত্বেও, সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভবত বাড়ছে এমন কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভোক্তারা কেনাকাটা বাড়িয়েছেন এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ আটলান্টা ধারণা করছে যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতি ভালো গতিতে বেড়েছে। এপ্রিল-জুন সময়কালেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছিল।

ফেডারেল রিজার্ভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হলো, এই প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান বাজারে প্রাণ ফেরাতে পারবে কিনা, যা হয়তো শুক্রবারের প্রতিবেদনে দেখা যেতে পারত। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, দুর্বল নিয়োগ অব্যাহত থাকবে এবং নতুন করে মাত্র ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। বেকারত্বের হার ৪.৩ শতাংশে স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিটে, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত মাসের প্রথম শুক্রবার প্রকাশিতব্য মাসিক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এটি অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয় এবং ফেডারেল রিজার্ভ কীভাবে সুদের হার সমন্বয় করতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়, যা ঋণ নেওয়ার খরচকে প্রভাবিত করে এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থ কিভাবে বরাদ্দ করতে হবে, সে বিষয়ে প্রভাব ফেলে।

তবে, এখন পর্যন্ত অচলাবস্থার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগের সৃষ্টি হয়নি। বুধবার বিস্তৃত এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক সামান্য বেড়েছে এবং তা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অর্থনীতির পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য সরকারি তথ্যের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্য বিভাগের মাসিক খুচরা বিক্রয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন মার্কিন ভোক্তাদের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয় এবং কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম ও কর্মী বাহিনী সম্প্রসারণ বা সংকুচিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।

বর্তমানে, ফেডারেল রিজার্ভ, অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগকারীরা সম্ভবত বেসরকারি তথ্যের ওপর বেশি মনোযোগ দেবেন। বুধবার, বেতন প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা ADP তাদের মাসিক কর্মসংস্থান বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা গেছে সেপ্টেম্বরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ৩২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। এটি অর্থনীতির দুর্বল হওয়ার একটি ইঙ্গিত।

তবে, ADP এর প্রধান অর্থনীতিবিদ নেলা রিচার্ডসন বলেছেন, তার সংস্থার প্রতিবেদন সরকারি পরিসংখ্যানের “বিকল্প হিসেবে তৈরি হয়নি।” ADP-এর ডেটা সরকারি সংস্থাগুলোতে কী ঘটছে, তা ধারণ করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চললে অর্থনীতির ওই অংশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, “বেসরকারি ও সরকারি উভয় খাতের ডেটা ব্যবহার করলে একটি জটিল বিশ্বে একটি খুবই জটিল অর্থনীতিকে ভালোভাবে চিত্রিত করার সুযোগ পাওয়া যায়।

ফেডারেল রিজার্ভ নিজস্ব অর্থায়নে চলে, তাই অচলাবস্থা দীর্ঘ হলেও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তারা শিল্প উৎপাদন, যার মধ্যে খনি, উৎপাদন এবং ইউটিলিটি আউটপুট অন্তর্ভুক্ত, তার মাসিক চিত্র সরবরাহ করতে থাকবে। আগামী ১৭ অক্টোবর শিল্প উৎপাদন বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *