বক্সিংয়ে নারীদের প্রবেশাধিকার ছিল না, চ্যাম্পিয়ন হলেন ব্র্যাকহাস!

শিরোনাম: বক্সিংয়ের দুনিয়ায় এক নারীর জয়যাত্রা: সেসিলিয়া ব্র্যাকহাসের অবিস্মরণীয় কাহিনী

খেলাধুলার জগৎ সবসময়ই অনুপ্রেরণামূলক গল্পের জন্ম দেয়। তেমনই এক অনুপ্রেরণামূলক নাম সেসিলিয়া ব্র্যাকহাস। কলম্বিয়াতে জন্ম হলেও নরওয়েতে বেড়ে ওঠা এই নারী বক্সিংয়ের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করেছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাধা, নিজ দেশে বক্সিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা, এইসব প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি হয়ে উঠেছেন অপরাজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সম্প্রতি তিনি তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চলেছেন, তবে তার লড়াইয়ের গল্প আজও অনেকের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ।

**বক্সিংয়ের শুরু এবং প্রতিকূলতা**

সেসিলিয়ার বক্সিংয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় কৈশোরে। সেই সময় নরওয়েতে পেশাদার বক্সিং ছিল নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। বক্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মেয়েদের প্রবেশাধিকার ছিল না। অনেক কোচ তাদের প্রশিক্ষণ দিতেও রাজি হতেন না।

কিন্তু ব্র্যাকহাস ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমাজের এই বাধাগুলো তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, বরং আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি লুকিয়ে স্থানীয় একটি জিমে গিয়ে কিckবক্সিং অনুশীলন করতেন এবং পরে অ্যামেচার বক্সিংয়ে নাম লেখান।

**জার্মানিতে পাড়ি এবং সাফল্যের সূচনা**

নিজ দেশে বক্সিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্র্যাকহাস জার্মানির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি “ফার্স্ট লেডি” নামে পরিচিত হন। জার্মান প্রোমোটার উইলফ্রিড সওয়েরল্যান্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া প্রথম নারী বক্সার ছিলেন তিনি। এরপর শুরু হয় তার দীর্ঘ এবং সফল ক্যারিয়ার।

**শিরোপা জয় এবং বিশ্বজয়**

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্রোয়েশিয়ার ইভানা হাবাজিনকে পরাজিত করে ব্র্যাকহাস বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। এই জয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি WBA, WBC, এবং WBO-এর খেতাব জয় করেন এবং প্রথম নারী হিসেবে এই খেতাব জেতেন।

তার প্রশিক্ষক জোনাথন ব্যাংকস সিএনএন স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে এমন কোনো চ্যাম্পিয়ন খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে এত বেশি মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছেন।

**নিজ দেশে নিষেধাজ্ঞা অপসারণের লড়াই**

বক্সিংয়ের বাইরেও ব্র্যাকহাস আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি নরওয়েতে ফিরে এসে রাজনীতিবিদ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন, যাতে পেশাদার বক্সিংয়ের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এই সময়, বক্সিং নিয়ে সমাজে একটা নেতিবাচক ধারণা ছিল।

ব্র্যাকহাস এই ধারণা দূর করতে এবং নরওয়েতে খেলাটিকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নরওয়ের পার্লামেন্ট পেশাদার বক্সিংয়ের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, যা ব্র্যাকহাসের জন্য ছিল অন্যরকম এক জয়।

**নারীদের জন্য পথপ্রদর্শক**

ব্র্যাকহাসের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে মহিলা বক্সারদের অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। ২০১৮ সালে, তিনি HBO-তে প্রচারিত প্রথম মহিলা বক্সিং ম্যাচে অংশ নেন। যেখানে তিনি কালিরিসকে পরাজিত করেন।

ব্র্যাকহাস মনে করেন, এখনো অনেক কিছু নারীদের জন্য অর্জিত হওয়া বাকি। খেলাধুলায় মেয়েদের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত এবং তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।

**বিদায় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা**

ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে ব্র্যাকহাস এখন অবসর নিতে প্রস্তুত। এই মুহূর্তে তার শেষ লড়াইটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি লেখালেখি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত হতে চান।

সেসিলিয়ার এই জয়যাত্রা শুধু একটি খেলার গল্প নয়, বরং একজন নারীর আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় এবং সমাজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *