স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া: রাতে কি চুপ থাকা উচিত? নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য!

রাতের বেলা ঝগড়া মিটিয়েই ঘুমাতে যাওয়া উচিত—এমন ধারণা কি সবসময় সঠিক? অনেক দম্পতিই হয়তো এই ধারণার সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবসময় এটা করাটা হয়তো ফলপ্রসূ নয়। বরং এতে সম্পর্কের ক্ষতিও হতে পারে।

মেরিল্যান্ডের একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সামান্থা হোয়াইটেন বলেন, “এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। এর ফলে ক্লান্ত অবস্থায় মানুষ ঝগড়া করে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতে ঝগড়া করার বদলে এমন কিছু অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে যা একইসঙ্গে বিশ্রাম নিশ্চিত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

আমরা কেউই চাই না, মন খারাপ করে ঘুমোতে যেতে। হোয়াইটেন বলেন, কোনো সমস্যা হলে, তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা ভালো। কিন্তু ঘুমানোর আগে দ্রুত, ভালোবাসাপূর্ণভাবে সব মিটিয়ে ফেলা সবসময় সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, “বিষয়টি শুনতে ভালো লাগে, তবে এটা রূপকথার মতোই।”

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধারণার উৎস পাওয়া যায় বাইবেলের একটি অংশে। সেখানে বলা হয়েছে, “রাগ করলে পাপ করো না; সূর্যাস্তের আগেই তোমার রাগ দূর করো।”

সমস্যা হলো, যখন মানুষ আবেগগতভাবে বিপর্যস্ত থাকে, তখন তাদের ঝগড়া করা উচিত নয়। হোয়াইটেন একটি সূত্রের কথা উল্লেখ করেন—HALT (Hungry, Angry, Lonely, Tired)। এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেয়, যখন কেউ ক্ষুধার্ত, রাগান্বিত, একা বা ক্লান্ত থাকে, তখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। অনেক সময় রাতে মদ্যপানও করা হয়, যা শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক নয়।

হোয়াইটেন বলেন, “তখন তারা হয়তো এমন কিছু বলতে বা করতে পারে, যা তাদের পরে দুঃখ দেবে।”

তাহলে, এখন কী করা উচিত?

নিউইয়র্ক সিটির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সাবরিনা রোমানফ বলেন, রাতে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা সহজ মনে হতে পারে, কারণ সঙ্গীর সেই সময়টাতেই পাওয়া যায়।

কিন্তু আলোচনার পরিবর্তে, সমস্যাটি চিহ্নিত করে কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়া এবং পরে আলোচনা করার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করা ভালো। যেমন—পরের দিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় অথবা কফি খাওয়ার সময় বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যেতে পারে।

এখানে মূল বিষয় হলো, সেই আলোচনাটি চালিয়ে যাওয়া।

রোমানফ বলেন, “এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আপনি আপনার সঙ্গীর উপর কতটা আস্থা রাখেন। আপনি বিশ্বাস করেন, আপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন।” তিনি আরও যোগ করেন, এই অভ্যাস তৈরি করতে দম্পতিদের অনুশীলন করতে হয়।

এখানে নিজেদের এবং সঙ্গীর প্রয়োজনগুলো বোঝাটাও জরুরি। যখন কারো একটু আলাদা থাকার প্রয়োজন হয়, তখন সঙ্গীর উচিত এটিকে প্রত্যাখ্যান হিসেবে বিবেচনা না করা।

তাহলে, বিরতি নেওয়ার অর্থ কী, আর এড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্যই বা কোথায়?

হোয়াইটেনের মতে, অনেক দম্পতির মধ্যে এমন একজন থাকেন, যিনি ঝগড়া না মিটিয়ে ঘুমাতে পারেন না। এটি উদ্বেগের একটি লক্ষণ এবং অনিশ্চয়তার সঙ্গে তাদের অস্বস্তি হয়।

তিনি বলেন, “প্রত্যেকেরই নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে আনা শিখতে হবে এবং নিজেকে বোঝাতে হবে যে, সবকিছু ঠিক আছে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

অন্যদিকে, এড়িয়ে যাওয়াটাও ভালো নয়। হয়তো কারো একটু সময় দরকার, কিন্তু পরে অবশ্যই সঙ্গীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

হোয়াইটেন বলেন, “লক্ষ্য হলো—উভয়েই যেন নিজেদের নিরাপদ মনে করেন, মতের অমিলকে স্বীকার করেন এবং বোঝেন যে, একটি ঝগড়ার চেয়ে তাদের সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন মানুষ এটা করতে পারে, তখন সত্যিই পরিবর্তন আসে।”

ঝগড়া শুরু হওয়ার আগেই তা থামানো যেতে পারে।

রোমানফ পরামর্শ দেন, দম্পতিদের নিয়মিতভাবে নিজেদের মধ্যে কথা বলা উচিত। সবসময় যে জীবনের সবচেয়ে খারাপ সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে, তা নয়। বরং, ছোট ছোট আলোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, নিয়মিতভাবে সঙ্গীর দিনটি কেমন কাটল, তা জিজ্ঞেস করা—এমনকি এই সাধারণ কথোপকথনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানসিক নিরাপত্তার ভিত্তি তৈরি করে। এর মাধ্যমে সমস্যাগুলো আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়।

যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে “আমি” (“I”) দিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন, আপনার কী প্রয়োজন, তা স্পষ্টভাবে জানান এবং কীভাবে সেই চাহিদা পূরণ করা যায়, সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করার চেষ্টা করুন। সঠিক সময়ে করা একটি অনুরোধ প্রায়ই ভালো ফল দেয়।

রোমানফ বলেন, “যোগাযোগের ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম।”

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *