মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য বিশাল সহায়তা প্যাকেজ বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলা বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন কৃষকদের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি অর্থ সহায়তা প্যাকেজ বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রে এমনটাই জানা গেছে। এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে মার্কিন কৃষি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
জানা গেছে, শুল্ক আরোপের কারণে বিদেশি পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং অন্যান্য কারণে কৃষি উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক সংকট। এছাড়া, বিভিন্ন কৃষি পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে কৃষি উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪৬৭.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বেশি। এমন পরিস্থিতিতে, দেশটির অনেক কৃষক দেউলিয়া হওয়ার পথে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি, বিশেষ করে অভিবাসন সংক্রান্ত শ্রমিক সংকট এবং চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এর মধ্যে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সয়াবিন উৎপাদনকারী কৃষকরা। সম্প্রতি, চীন মার্কিন সয়াবিনের উপর শুল্ক আরোপ করায় দেশটির রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে, অনেক সয়াবিন চাষী মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সমস্যাগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন এবং দ্রুত এর সমাধানে পদক্ষেপ নিতে চাইছেন। কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর, কৃষকদের সহায়তার জন্য দুটি প্রধান বিকল্পের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রথমত, সরকার আমদানি করা পণ্যের উপর যে শুল্ক আদায় করছে, তার একটি অংশ কৃষকদের দেওয়া হতে পারে। দ্বিতীয়ত, কৃষি বিভাগের একটি বিশেষ তহবিল (Emergency Commodity Assistance Program) থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হতে পারে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সহায়তা প্যাকেজের চূড়ান্ত পরিমাণ কৃষকদের প্রয়োজন এবং শুল্ক থেকে কত রাজস্ব আয় হয়, তার ওপর নির্ভর করবে। বর্তমানে, ১০ বিলিয়ন থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, কৃষকদের রক্ষা করা একটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। কারণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা অপরিহার্য। তারা মনে করেন, অন্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করার উপর নির্ভর করা হলে তা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন সয়াবিন উৎপাদনকারীরা চীন সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, চীন বিশ্বের বৃহত্তম সয়াবিন ক্রেতা এবং তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, বিশ্ববাজারে কৃষি পণ্যের দাম এবং সরবরাহ পরিস্থিতি অনেক সময় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন