অস্ট্রেলিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা নিয়ে চীন তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। সোমবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) দুই দেশের সরকার প্রধান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে দেশ দুটির মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়বে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে এই চুক্তিকে “পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে নজিরবিহীন সমন্বয় ঘটবে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ার এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চুক্তি। এর আগে, ১৯৫১ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ANZUS চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
অন্যদিকে, পাপুয়া নিউ গিনির জন্য এটি প্রথম এ ধরনের কোনো চুক্তি।
চুক্তি অনুযায়ী, কোনো পক্ষের উপর সশস্ত্র হামলার শিকার হলে উভয় দেশই একে অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আলবানিজ বলেন, “এই চুক্তিতে আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষার অঙ্গীকার রয়েছে। কোনো দেশের উপর সশস্ত্র আক্রমণ হলে, আমরা সবাই মিলে সেই বিপদ মোকাবিলা করব।”
চুক্তি স্বাক্ষরের পর চীনের পক্ষ থেকে এর তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি কোনো তৃতীয় পক্ষের স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে না। তারা আরও বলেছে, “চুক্তিটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত নয় এবং কোনো সার্বভৌম দেশকে তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বাধা দেওয়া উচিত নয়।”
পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, এই চুক্তি তাদের পররাষ্ট্র নীতির পরিপন্থী নয়। তিনি জানান, “আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো এবং আমরা তাদের জানিয়েছি যে, নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া আমাদের প্রধান অংশীদার।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে চীনকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া উভয়ই মনে করে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য পাপুয়া নিউ গিনির কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
তবে, পাপুয়া নিউ গিনির জন্য এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি। কারণ, তারা চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
উল্লেখ্য, বেইজিংয়ের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই সলোমন দ্বীপপুঞ্জে চীনের প্রভাব বেড়েছে। এছাড়া, ফিজিসহ আরও কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলো মনে করে, এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিশেষ করে, নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বর্তমানে, অস্ট্রেলিয়া ফিজি’র সঙ্গেও একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এছাড়াও, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র পাপুয়া নিউ গিনি, ফিজি এবং টোঙ্গার নিজস্ব সামরিক বাহিনী রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস