আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ (Vogue)-এর প্রকাশক কন্ডে নাস্ট (Condé Nast) তাদের সম্পাদকীয় এবং বিজ্ঞাপনে নতুন পশুর লোম ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই সিদ্ধান্ত ফ্যাশন জগতে পশু অধিকার এবং নৈতিকতার প্রশ্নে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভোগ-এর এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো, ফ্যাশন শিল্পে পশুর লোমের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসা। অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন কানাডা গুস, গুচি, নেট-এ-পোর্টার, ভার্সাচি, প্রাদা, নেইমান মার্কাস এবং মাইকেল Kors-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের পণ্য থেকে পশুর লোম বাদ দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এমনকি, ২০১৯ সালে, জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘এলে’ (Elle) তাদের আন্তর্জাতিক সংস্করণেও পশুর লোম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
কন্ডে নাস্ট-এর এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে ‘কোয়ালিশন টু অ্যাবোলিশ দ্য ফার ট্রেড’ (CAFT)। এই সংগঠনটি প্রায় নয় মাস ধরে ভোগ-এর সম্পাদকদের বাড়ি এবং ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ফ্যাশন জগতে পশুর লোমের ব্যবহার বন্ধ করা।
তবে, সম্প্রতি ‘মব ওয়াইভস’ নামে একটি ফ্যাশন ট্রেন্ডের কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পশুর লোমের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। এই ট্রেন্ডে বড় আকারের লোমের কোট, পশুর চামড়ার ডিজাইন এবং ঝলমলে সোনার গয়নার ব্যবহার দেখা যায়। এই বিষয়টিও কন্ডে নাস্ট-এর নজরে আসে।
কন্ডে নাস্ট-এর নতুন নীতি অনুযায়ী, জীবনধারণ ও আদিবাসী ঐতিহ্য রক্ষার জন্য পশুর লোম ব্যবহারের কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরিতে পশুর লোম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে।
ফ্যাশন জগতে পশুর লোমের ব্যবহার বন্ধের এই প্রবণতা প্রাণী অধিকার কর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল। প্রতি বছর, পোশাকের জন্য লাখ লাখ পশুকে হত্যা করা হয়, যা প্রাণী অধিকার কর্মীদের উদ্বেগের কারণ। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, নরওয়ে এবং ইজরায়েলের মতো দেশগুলোতে পশুর লোম উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভোগ-এর প্রাক্তন সম্পাদক আনা উইন্টুর (Anna Wintour) দীর্ঘদিন ধরে পশুর লোম ব্যবহারের পক্ষে তাঁর মতামত দিয়েছেন। তবে, কন্ডে নাস্ট-এর এই নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফ্যাশন জগতে পশু অধিকার এবং নৈতিকতার বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন