পেরুর বিরুদ্ধে অবৈধ সোনা খনন ও পারদ পাচার বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট। এই জোটে পেরু ছাড়াও রয়েছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও বলিভিয়া।
স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অভিযোগ, অবৈধ সোনার খনি থেকে নির্গত পারদের কারণে তাদের নদী ও খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
আন্দিয়ান কমিউনিটি নামক এই বাণিজ্য জোট পেরুকে জরুরি ভিত্তিতে আইন সংস্কার, নদীগর্ভ থেকে বালি উত্তোলনের যন্ত্রপাতি জব্দ এবং অবৈধ খনি শ্রমিকদের নিবন্ধনের মেয়াদ বৃদ্ধি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া অবৈধ কার্যকলাপকে সুরক্ষা দেয়।
বিষয়টি নিয়ে এর আগে কোনো সদস্য দেশের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পেরুকে এই নির্দেশ মানতে এবং গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানাতে ২০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
যদি দেশটি নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে জোটের বিচার বিভাগীয় ট্রাইব্যুনালে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। এই ট্রাইব্যুনাল সদস্য দেশগুলোর ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
জানা গেছে, গত জুনে নানায় নদী এলাকার আদিবাসী ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি জোট এই অভিযোগ দায়ের করে। তাদের দাবি, অবৈধ সোনা খনি থেকে নির্গত পারদের কারণে পেরুর উত্তরাঞ্চলের আমাজনের নদীগুলোতে মাছ ও জলজ প্রাণী মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
সেখানকার মানুষের চুলের নমুনা পরীক্ষা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পারদ পাওয়া গেছে। এর ফলে চর্মরোগ, পেটের সমস্যা এবং স্নায়বিক দুর্বলতার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
এ বিষয়ে পেরুর পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী সিজার ইপেনজা বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত পারদ দূষণের শিকার হওয়া সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন এবং অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি বার্তা যে, তাদের অবশ্যই পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।” তিনি আরও জানান পেরু যদি এই নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, যেমন – জোটের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে পেরুর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
যদিও পেরু সরকার এর আগে অবৈধ পারদ ব্যবসার বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৯ সালে ‘অপারেশন মারকারি’ নামে অভিযান চালানো হয় এবং কল্লাও বন্দরে বিপুল পরিমাণ পারদ জব্দ করা হয়।
তবে আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের কারণে এই ব্যবসা এখনো চলছে।
পেরুর বাণিজ্য ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অথবা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের (যারা আদিবাসী বিষয়ক কার্যক্রম দেখাশোনা করে) কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিজার ইপেনজা আরও বলেন, “সোনার গন্তব্য হওয়া দেশগুলোর প্রতি এটি একটি সতর্কবার্তা। তাদের অবশ্যই সোনার উৎস সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। আমাজন ধ্বংস, দূষণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আসা সোনার ব্যবসা বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস