আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগের জোয়ার উঠেছে বিশ্বজুড়ে। তবে এই বিপুল বিনিয়োগের মাঝে একটি গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯৯০ দশকের শেষের দিকের ডট-কম বুদ্বুদের (dot-com bubble) পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ওপেনএআই (OpenAI) এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যেকার আর্থিক লেনদেনগুলো এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ওপেনএআই, যারা সম্ভবত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট কোম্পানি, তারা সম্প্রতি চিপ প্রস্তুতকারক এএমডি (AMD)-এর সাথে একটি চুক্তি করেছে। এই চুক্তির ফলে এএমডি ওপেনএআই-কে ১৬০ মিলিয়ন শেয়ার পর্যন্ত ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে ওপেনএআই একদিকে যেমন গ্রাহক, তেমনই আরেক দিকে বিনিয়োগকারীর ভূমিকা পালন করবে। এটি অনেকটা নগদ অর্থের পরিবর্তে শেয়ারের মাধ্যমে ঝুঁকি স্থানান্তরের মতো।
এই ধরনের ব্যবস্থাগুলি, যা ‘ভেন্ডর ফাইন্যান্সিং’ (vendor financing) নামে পরিচিত, তা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বাজারে বেশ সাধারণ হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে এআই খাতে চাহিদা এবং বিনিয়োগের পরিমাণ কতটুকু বাস্তব, আর কতটুকু কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হচ্ছে, তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কারণ, এই বাজারের প্রধান খেলোয়াড়রা—যেমন ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, গুগল, এনভিদিয়া, এবং ওরাকল—তাদের মধ্যে প্রায়শই অর্থ ও সেবার আদান-প্রদান করছে। এই পরিস্থিতি দেখে অনেকের মনে হচ্ছে, যেন এটি একটি বিশাল বুদ্বুদ, যেখানে কোম্পানিগুলো কেবল নিজেদের মধ্যে পুঁজি ঘোরাঘুরি করাচ্ছে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে, এই পরিস্থিতি ১৯৯০ দশকের শেষের দিকের ডট-কম বুদ্বুদের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেসময়, ‘ভেন্ডর ফাইন্যান্সিং’-এর মাধ্যমে টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করত, যা মূলত তাদের পণ্যের চাহিদা বজায় রাখতে সাহায্য করত।
কিন্তু পরবর্তীতে যখন সেই চাহিদা কমে যায়, তখন কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান এআই বাজারের সঙ্গে ডট-কম বুদ্বুদের কিছু মিল রয়েছে। যেমন, কোম্পানিগুলোর অতিমূল্যায়ন এবং ‘ভেন্ডর ফাইন্যান্সিং’-এর ব্যবহার। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ডট-কম যুগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী আর্থিক অবস্থানে রয়েছে।
তবে, এই আর্থিক লেনদেনগুলোর বাইরে, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের ফল কী? বর্তমানে বাজারে প্রচলিত লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (Large Language Models বা LLM)-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি জেনারেটিভ এআই (generative AI) প্রযুক্তি নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে।
অনেকে বলছেন, এই প্রযুক্তি এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল দিতে পারেনি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী ৩০০টি কোম্পানির মধ্যে ৯৫ শতাংশই তাদের এআই বিনিয়োগ থেকে কোনো লাভ করতে পারেনি।
এমনকি, এআই তৈরি করা কিছু ‘অবাস্তব’ বা ‘অর্থহীন’ উপস্থাপনাও বিভিন্ন শিল্পে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এআই-এর এই উত্থান একটি বিশাল বুদ্বুদ, যা সম্ভবত ডট-কম বা ২০০৮ সালের আবাসন বাজারকেও (real estate bubble) ছাড়িয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জুলিয়ান গ্যরান (Julien Garran) মনে করেন, এআই খাতে পুঁজির ভুল ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট এই বুদ্বুদ ডট-কম বুদ্বুদের চেয়ে ১৭ গুণ এবং ২০০৮ সালের আবাসন বাজারের বুদ্বুদ থেকে চার গুণ বড় হতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এলএলএম এআই ইকোসিস্টেমের বেশিরভাগ অংশই বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তার মতে, এনভিদিয়ার (Nvidia) বিনিয়োগের ফলেই এই বুদ্বুদ টিকে আছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)