আতঙ্কের খবর! শরীরে প্লাস্টিকের বিষ, সিএনএন-এর পরীক্ষায় ভয়ঙ্কর তথ্য

প্লাস্টিকের বিপদ: আমাদের অজান্তেই কি স্বাস্থ্যহানি?

ঢাকা, [আজকের তারিখ]। সম্প্রতি, বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিভাবে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী আমাদের অজান্তে ডেকে আনছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। নিউ ইয়র্ক সিটি, লন্ডন এবং হংকং-এর তিনজন সিএনএন সাংবাদিকের শরীরে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য বিশেষ ‘wristband’ ব্যবহার করা হয়েছিল।

পরীক্ষার ফল রীতিমতো উদ্বেগজনক।

এই অনুসন্ধানে জানা যায়, প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান, যা আমাদের চারপাশে বিদ্যমান, মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এই রাসায়নিকগুলি প্লাস্টিক থেকে নির্গত হয়ে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস, খাদ্য এবং ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, প্লাস্টিকের উৎপাদনে ব্যবহৃত হওয়া প্রায় ১৬,০০০-এর বেশি রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ৪,২০০টির বেশি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

এর মধ্যে অনেক রাসায়নিকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনো ধারণা নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকে থাকা কিছু রাসায়নিক উপাদান, যেমন – ‘ফথ্যালেট’ (Phthalates) এবং ‘বিসফেনলস’ (Bisphenols) শরীরের হরমোনগত কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

এই কারণে বন্ধ্যাত্ব, শিশুদের আচরণগত সমস্যা, স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।

সিএনএন-এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের শরীরে গড়ে ২৮ ধরনের রাসায়নিক পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে ‘ফথ্যালেট’ নামক রাসায়নিকের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

এই ‘ফথ্যালেট’ প্লাস্টিককে নমনীয় করতে ব্যবহৃত হয় এবং এটি খাদ্য মোড়ক, খেলনা, পোশাক এবং আসবাবপত্রে পাওয়া যায়।

এছাড়া, ‘বিসফেনলস’ ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, গাড়ির যন্ত্রাংশ, খেলনা, রান্নার সরঞ্জাম, খাদ্য ও পানীয়ের ক্যানেও পাওয়া যায়।

বর্তমানে বাংলাদেশেও প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে।

বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, খেলনা এবং বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।

এখানকার বাজারে উপলব্ধ অনেক পণ্যের উপাদান সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারণা নেই।

ফলে, অজান্তেই আমরা প্লাস্টিকের ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসছি।

বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে কিছু জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন।

যেমন – খাদ্য ও পানীয়ের জন্য কাঁচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা, মাইক্রোওয়েভে প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা এবং শিশুদের কাঠের খেলনা ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করা।

এছাড়া, ঘরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা উন্নত করা এবং প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি এবং ব্যক্তিগত, উভয় পর্যায়ে সচেতনতা ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে প্রচার চালানো, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা এখন সময়ের দাবি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *