শেয়ারের পতন! সোনার দামে আগুন, বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ!

বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা: সোনার দামে উল্লম্ফন, শেয়ার বাজারে মিশ্র প্রভাব।

আন্তর্জাতিক বাজারে শেয়ারের দামে মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে সোনার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার কিছুটা দুর্বল হলেও ইউরোপের বাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী। ফ্রান্স ও জাপানের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার কিছুটা নিম্নমুখী ছিল। এর বিপরীতে, ইউরোপীয় বাজারে সূচকের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু মন্ত্রীদের নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। জার্মানির ডিএএক্স সূচক ০.৩ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ০.৩ শতাংশ বেড়েছে। ফ্রান্সে সিএসি ৪০ সূচক ০.৬ শতাংশ বেড়ে ৮,০২১.৫০-এ দাঁড়িয়েছে।

সোনার দাম ক্রমাগত বাড়ছে। মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪,০০০ ডলার অতিক্রম করে। বুধবার বাজারে এর দাম আরও বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪,০৬২.১০ ডলার। সাধারণত, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে হেজ হিসেবে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ মনে করেন। বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের বিশাল ঋণের বোঝা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ঘোষণার কারণে চলতি বছরে সোনার দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

অন্যদিকে, জাপানে রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সানায়ে তাকাইচি নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি সুদের হার কম রাখার পক্ষে। এর ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দরপতন হয়েছে। বুধবার সকালে এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১৫২.৪৫ ইয়েন, যা আগের দিন ছিল ১৫১.৯০ ইয়েন। একই সময়ে ইউরোর দরও কমে ১.১৬২৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। টোকিওর নিক্কেই ২২৫ সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে।

এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য বাজারেও মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৫ শতাংশ এবং তাইওয়ানের তাইএক্স সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে। তবে ভারতের সেনসেক্স সূচক সামান্য বেড়েছে। চীনের বাজারগুলো ছুটির কারণে বন্ধ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও অস্থিরতা দেখা গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৪ শতাংশ এবং ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.২ শতাংশ কমেছে। প্রযুক্তি কোম্পানি টেসলার শেয়ারের দর কমেছে ৪.৪ শতাংশ। ওরাকলের শেয়ারের দরও কমেছে ২.৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত উত্থান শেয়ার বাজারে উৎসাহ যোগাচ্ছে, তবে এর উচ্চ মূল্য নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, এআই খাতে বিনিয়োগের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি আরও উৎপাদনশীল হবে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তবে, এমনটা না হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

বুধবার সকালে, অপরিশোধিত তেলের দাম সামান্য বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬২.১৪ ডলারে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজার মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দামও বেড়েছে, যা প্রতি ব্যারেল ৬৫.৮৩ ডলারে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্ববাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি স্থানীয় বাজারে গহনার দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তেলের দামের পরিবর্তন দেশের আমদানি-রপ্তানি এবং পরিবহন ব্যয়ের উপর প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে, শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *