সোশ্যাল মিডিয়ায় কিশোর ছেলের জগৎ: নতুন সমীক্ষায় উদ্বেগের চিত্র।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা জানাচ্ছে, কিশোর ছেলেরা বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে এমন কিছু বিষয় দেখছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১,০০০ এর বেশি বালকের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। গবেষণা বলছে, ছেলেরা অনলাইনে যে ধরনের বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পুরুষত্ব, শরীরের গঠন এবং মেয়েদের সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা।
ডিজিটাল পুরুষত্ব এবং তার প্রভাব।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ ছেলে নিয়মিতভাবে “ডিজিটাল পুরুষত্ব”-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কন্টেন্ট দেখে। এর মধ্যে রয়েছে মারামারি, পেশী তৈরি এবং অর্থ উপার্জনের মতো বিষয়গুলো। উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ধরনের কন্টেন্টের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হওয়া ছেলেদের মধ্যে আত্ম-সম্মান কম এবং তারা একাকীত্বে ভোগে। তারা তাদের অনুভূতিগুলো, যেমন কান্না বা ভয়, প্রকাশ করতেও দ্বিধা বোধ করে।
বিষয়টি আরও গভীর: চেহারা ও লিঙ্গ বৈষম্য।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ ছেলে তাদের চেহারা বা শারীরিক গঠন নিয়ে বিভিন্ন বার্তা দেখে থাকে। এই ধরনের কন্টেন্ট তাদের মধ্যে নিজেদের চেহারা পরিবর্তনের চিন্তা তৈরি করে। এছাড়াও, প্রায় ৬৯ শতাংশ ছেলে এমন কন্টেন্ট দেখে, যেখানে মেয়েদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়া হয়। যেমন, মেয়েদের নির্দিষ্ট ধরনের ছেলেদের পছন্দ করা বা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য রূপ ব্যবহার করার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর ছেলেদের সামাজিক মাধ্যমে দেখা বিষয়গুলো নিয়ে বাবা-মায়ের সচেতন হওয়া উচিত। অভিভাবকদের তাদের ছেলেদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার। মনোবিদদের মতে, ছেলেদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার সময় তাদের কথা শোনা এবং তাদের উদ্বেগের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
আলোচনা শুরুর কিছু কৌশল:
- ছেলেদের অনলাইনে তারা কী দেখে, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন।
- তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন, কেন সামাজিক মাধ্যমে দেখা সব কিছুই বিশ্বাস করা উচিত নয়。
- যদি কোনো ছেলে কোনো বিষয়ে ভুল ধারণা পোষণ করে, তবে তাকে সরাসরি ভুল বলার পরিবর্তে, সেই বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করুন এবং সঠিক তথ্য দিন।
- তাদের বোঝান, সমাজে বিভিন্ন ধরনের পুরুষ এবং নারীর স্থান রয়েছে।
পিতা-মাতার ভূমিকা।
ছেলেদের সুস্থ মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের উচিত ছেলেদের জন্য সমাজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা। তাদের বন্ধু, শিক্ষক এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহিত করা। খেলাধুলা এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা যেতে পারে।
উপসংহার।
সামাজিক মাধ্যমের এই যুগে, কিশোরদের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ছেলেদের সুস্থ মানসিক বিকাশে সহায়তা করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং সমাজের ভালো দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত করানো অভিভাবকদের প্রধান দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।