যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর মনোভাব।
আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড যখন নিউ ইয়র্ক সিটিকে আর্থিক সংকট থেকে বাঁচাতে অস্বীকার করেছিলেন, তখন সেখানকার একটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল – “ফোর্ড টু সিটি: ড্রপ ডেড” (Ford to City: Drop Dead)। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন এখনকার সময়ে দেখা যাচ্ছে, তবে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে, যখন বিভিন্ন শহরের প্রতি ফেডারেল সরকারের মনোভাব আরও কঠোর রূপ নিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলো, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা শাসিত শহরগুলো, বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফেডারেল তহবিল হ্রাস, শহরগুলোতে সামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বাধা দেওয়া। এই বিষয়গুলো শহরের মেয়র ও কর্মকর্তাদের হতাশ করেছে, কারণ তারা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কথা শুনছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, শহরগুলোর ক্ষমতা সীমিত। তারা রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কর বৃদ্ধি বা ঋণ নিতে পারে না। অনেক রাজ্যে এমন আইন তৈরি করা হয়েছে, যা শহরের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাস রাজ্যে একটি আইন পাস করা হয়েছে, যা প্রগতিশীল শহরগুলোকে তাদের নিজস্ব আইন তৈরি করতে বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে শহরগুলোর পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরগুলোর প্রতি এই বৈরী মনোভাব নতুন কিছু নয়। তবে বর্তমানে এটি চরম আকার ধারণ করেছে। তারা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে শহরগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, শহরগুলো জাতীয় সমস্যা, যেমন – গৃহহীনতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও সম্পদ পায় না। কারণ তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ফেডারেল তহবিল আসে না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সিংহভাগ – প্রায় ৯০ শতাংশ – আসে শহরগুলো থেকে। দেশের কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশও তৈরি হয় শহরে। এছাড়াও, শহরের আয় গ্রামীণ এলাকা এবং ছোট শহরগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করে।
বিভিন্ন শহরের মেয়ররা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো তাদের শহরের জন্য ক্ষতিকর। উদাহরণস্বরূপ, কাঠের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া অভিবাসন বিষয়ক নীতির কারণে স্থানীয় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। তারা চান, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে আবাসন ব্যবস্থা উন্নত করা, জননিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করতে। তবে প্রশাসনের বর্তমান পদ্ধতিতে সহযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, যেখানে শহরগুলো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন