গাজায় যুদ্ধ এবং খাদ্য সংকটের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের একটি নতুন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রায় ৫৪,৬০০ জনের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার, যাদের মধ্যে ১২,৮০০ জনের অবস্থা খুবই গুরুতর।
গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে গাজায় ৬ মাস থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছিল। এদের মধ্যে প্রায় ৪ শতাংশের অবস্থা ছিল জীবন-হুমকির কারণ। অপুষ্টির এই পর্যায়কে ‘একিউট ওয়েস্টিং’ বলা হয়। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশেষ পুষ্টিকর খাবার এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরওয়া), যারা এই অঞ্চলের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে, তাদের করা এই গবেষণাটি ‘দ্য ল্যানসেট’ নামক চিকিৎসা বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, শিশুদের অপুষ্টির ওপর এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিত গবেষণা। এতে গাজার স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী ড. মাসাকো হোরিনো এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজা উপত্যকার হাজার হাজার শিশু এখন প্রতিরোধযোগ্য তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যখন গাজায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যেমন, প্রায় ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময়, তখন অপুষ্টির হার কিছুটা কমেছিল। কিন্তু যখন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তখন শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় দুর্ভিক্ষের খবরকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, হামাস এই ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহে বাধা এবং অবিরাম সামরিক অভিযানের কারণে, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর অপুষ্টির কারণে ৪৬১ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ১৫৭ জন শিশু। তাদের মতে, হাসপাতালগুলোতে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, তবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের তীব্র অভাব রয়েছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি অনেক বিশেষজ্ঞ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যকে নির্ভরযোগ্য মনে করেন।
গবেষণায় শিশুদের পুষ্টির অবস্থা পরিমাপ করার জন্য প্রশিক্ষিত নার্সরা শিশুদের হাতের মাঝের অংশের পরিধি মেপেছেন। যাদের হাতের এই অংশের পরিধি ১২৫ মিলিমিটারের কম, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি খাদ্য সহায়তা সংস্থা ‘এদেসিয়া’ গাজায় চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। তারা ২৮শে সেপ্টেম্বর ১,৫০০ বাক্স পণ্য সরবরাহ করেছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে আকাশ ও সমুদ্রপথে প্রায় ১৫,০০০ বাক্স পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজার অনেক মানুষ মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। তবে তথ্যের অভাবে আগে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকা ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির ২১ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ২ জন গাজায় নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে, সংঘাতে সংস্থাটির ৩৭0 জনের বেশি কর্মী নিহত হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস