মুক্তি নেই জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি নেতার! বিস্ফোরক কারণ জানালেন বিশ্লেষকরা

ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় নেতা মারওয়ান বারghুতিকে মুক্তি দিতে রাজি নয় ইসরায়েল। গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝে বন্দী বিনিময়ের যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে এই ফিলিস্তিনি নেতার মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং এর বিপরীতে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল সরকার মারওয়ান বারghুতির মুক্তির বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মারওয়ান বারghুতি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় একজন নেতা। তাকে মুক্তি দিলে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ঐক্যের সম্ভাবনা বাড়বে।

অনেকে তাকে ফিলিস্তিনের ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ হিসেবেও দেখেন। মারওয়ান বারghুতি বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

২০০৪ সালে ইসরায়েলে কয়েকটি হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যেখানে পাঁচজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল। হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বারghুতির মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে।

হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্দী বিনিময়ের চুক্তিতে বারghুতির মুক্তি তাদের প্রধান দাবিগুলোর একটি।

অন্যদিকে, ইসরায়েল মনে করে বারghুতির মুক্তি পেলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তার প্রভাব আরও বাড়বে, যা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

কারণ, বারghুতিকে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান দাবিদার হিসেবেও দেখা হয়।

গাজায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে, হামাস সোমবারের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে।

এছাড়াও, গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক করা আরও প্রায় ১,৭০০ জনকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।

মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে অনেকেই ২০০০ সালের দিকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে হামাস ও ফাতাহ্-এর সদস্যও রয়েছেন।

তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক, বসতি স্থাপনকারী এবং সেনাদের ওপর হামলা, বোমা হামলা বা হত্যার চেষ্টার অভিযোগ ছিল।

মুক্তির পর অর্ধেকের বেশি সংখ্যক বন্দীকে হয় গাজায় ফেরত পাঠানো হবে, না হয় ফিলিস্তিনের বাইরে অন্য কোনো দেশে নির্বাসনে পাঠানো হবে।

২০০০-এর দশকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ দেখা দেয়, যা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভের ফলস্বরূপ সংঘটিত হয়েছিল।

এই সময়ে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলিদের ওপর হামলা চালায় এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে।

মুক্ত হতে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে একজন হলেন ইয়াদ আবু আল-রুব। তিনি ইসলামিক জিহাদের কমান্ডার ছিলেন এবং ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ইসরায়েলে আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনা করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

এসব হামলায় ১৩ জন নিহত হয়।

অন্যদিকে, সবচেয়ে বয়স্ক এবং দীর্ঘকাল ধরে বন্দী থাকা ব্যক্তি হলেন ৬৪ বছর বয়সী সামির আবু নাআমা। তিনি ফাতাহ্-এর সদস্য ছিলেন এবং ১৯৮৬ সালে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুক্তি পেতে যাওয়াদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হলেন মোহাম্মদ আবু কাতিশ। তাকে ২০১৬ বছর বয়সে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ছুরিকাঘাতের চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, অতীতে হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে মুক্তি দেওয়ার পর যেমনটা দেখা গিয়েছিল, তেমনটা আবার ঘটতে পারে।

সিনওয়ারকে ২০১১ সালে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি ২০২১ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় মূল ভূমিকা পালন করেন।

মারওয়ান বারghুতি, যিনি বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সী, ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দুর্বল নেতৃত্বের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি তার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। জনমত জরিপেও বারghুতিকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি নেতা হিসেবে দেখা যায়।

১৯৫৯ সালে পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম নেওয়া বারghুতি, বার জেইট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ার সময় ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

প্রথম ফিলিস্তিনি বিদ্রোহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পরবর্তীতে, ইসরায়েল তাকে জর্ডানে নির্বাসিত করে। ১৯৯০-এর দশকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি পশ্চিম তীরে ফিরে আসেন।

দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর পর ইসরায়েল বারghুতির ওপর আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের প্রধান হওয়ার অভিযোগ আনে। যদিও বারghুতি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

২০২২ সালে তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকার আছে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *