যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন শীর্ষ উপদেষ্টা, স্টিফেন মিলার, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি, মিলারের নির্দেশে ফেডারেল এজেন্টের গুলিতে এক নারীর আহত হওয়ার ঘটনার পর, দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
খবর অনুযায়ী, মিলার পরিস্থিতিকে ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
হোয়াইট হাউজের নীতি বিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মিলারের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা। ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর তার গভীর প্রভাব রয়েছে, এবং অনেক সময় তাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
মিলারের মূল আগ্রহ মূলত অভিবাসন নীতিতে, তবে বর্তমানে তার কর্মপরিধি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে, ডেমোক্রেটদের দ্বারা পরিচালিত শহরগুলোতে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছেন। এর ফলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
শিকাগো এবং পোর্টল্যান্ডে ফেডারেল বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, যেখানে স্থানীয় নেতারা এর বিরোধিতা করছেন। মিলার এই বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে চলমান বিক্ষোভ এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি ‘অস্তিত্বের লড়াই’ হিসেবে তুলে ধরছেন।
তিনি সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, “বর্তমানে যে সংগ্রাম চলছে, তা হলো একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা এবং অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের আকারে রাস্তার সহিংসতার অবৈধ ব্যবহারের মধ্যেকার লড়াই।
মিলার, বিক্ষোভকারীদের ‘সহিংস’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। এর পাশাপাশি, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে তিনি ‘বৈধ বিদ্রোহ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মিলারের এমন কঠোর মন্তব্য অনেক ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। এমনকি, ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের মধ্যেও কেউ কেউ তার এই ধরনের আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহারের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, মিলারের এমন উগ্র পদক্ষেপ ট্রাম্পের ভাবমূর্তির ক্ষতি করতে পারে।
তবে, মিলারের সমর্থকরা বলছেন, তার এই কঠোর পদক্ষেপ একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। এর মাধ্যমে প্রশাসনের অপরাধ দমনের চিত্রকে জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে মিলারকে ট্রাম্পের একজন ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘদিনের সহযোগী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
মিলার একদিকে যেমন অভিবাসন এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তেমনিভাবে তিনি পররাষ্ট্রনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাদক পাচার বন্ধের উদ্দেশ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এমনকি, পেন্টাগন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সামরিক পরিকল্পনা তৈরিতেও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।
মিলারের এই ব্যাপক ক্ষমতা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা প্রশাসনের অভ্যন্তরে কিছু অসন্তোষ তৈরি করেছে। সমালোচকরা মনে করেন, একজন উপদেষ্টার এত ক্ষমতা থাকাটা কাম্য নয়।
অন্যদিকে, মিলার তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অবিচল। তিনি ট্রাম্পের ভিশন বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গীকৃত এবং ট্রাম্পের সবচেয়ে কাছের উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন