ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল: অভিযুক্তের পেছনে চ্যাটজিপিটি-র ‘নির্দেশ’

ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসিফিক প্যালিসাইডস-এ ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জোনাথন রাইন্ডারনেখট নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। নববর্ষের প্রাক্কালে সংঘটিত এই অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার ফলস্বরূপ বহু ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয় এবং বেশ কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগুন লাগানোর পেছনে রাইন্ডারনেখটের হাত ছিল, যিনি পেশায় একজন উবার চালক ছিলেন। ঘটনার তদন্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সনাতন পদ্ধতির এক দারুণ মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। জিপিএস ডেটা, অগ্নিকাণ্ডের ছবি শনাক্ত করতে সক্ষম ক্যামেরা, ডিএনএ বিশ্লেষণ এবং এমনকি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই চ্যাটবট-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

এই জটিল তদন্তে সহায়তা করেছে শত শত প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া বিভিন্ন সূত্র।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল সম্ভবত একটি লাইটার থেকে। রাইন্ডারনেখট ঘটনার দিন “হিডেন বুদ্ধা” নামে পরিচিত একটি নির্জন স্থানে গিয়েছিলেন।

এই স্থানে তিনি নিজের মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও ধারণ করেন এবং একটি ফরাসি গান শোনেন, যা হতাশা ও বিরক্তি নিয়ে রচিত।

আদালতের নথি অনুযায়ী, ঘটনার কয়েক মাস আগে রাইন্ডারনেখট একটি এআই চ্যাটবট-এ কিছু প্রশ্ন করেছিলেন, যা তদন্তকারীদের সন্দেহের কারণ হয়।

একবার তিনি চ্যাটবট-কে একটি “ভয়াবহ চিত্র” তৈরি করতে বলেন, যেখানে একটি জ্বলন্ত বন, আগুনের দিকে দৌড়ে যাওয়া মানুষ এবং ধনী ব্যক্তিদের একটি দল দেখানো হবে, যারা একটি বিশাল গেটের পাশে বসে সবকিছু উপভোগ করছে। এছাড়া, তিনি একবার লিখেছিলেন, “আমি আমার বাইবেল পুড়িয়েছি।

এটা দারুণ লেগেছে। নিজেকে মুক্ত মনে হয়েছে।”

নববর্ষের রাতে, রাইন্ডারনেখট-কে “উত্তেজিত ও রাগান্বিত” দেখা গিয়েছিল বলে উবারের দুই যাত্রী তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি “হিডেন বুদ্ধা” এলাকায় যান।

ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ এবং সেলুলার ডেটার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সেই রাতে ঐ স্থানে রাইন্ডারনেখট একাই ছিলেন।

আগুনের সূত্রপাতের পর রাইন্ডারনেখট প্রথমে ৯১১ নম্বরে ফোন করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি ফোন করে আগুনের খবর জানান।

তদন্তকারীরা বলছেন, এই সময় তিনি চ্যাটবট-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “আপনার সিগারেটের কারণে যদি আগুন লাগে, তবে কি আপনি দায়ী?”

তদন্তের অংশ হিসেবে, কর্মকর্তারা রাইন্ডারনেখটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই সময় তার দেওয়া কিছু বক্তব্য এবং ঘটনার প্রমাণে গরমিল পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেছিলেন যে, আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না, অথচ তিনিই নাকি প্রথম ব্যক্তি যিনি আগুন দেখতে পান এবং ৯১১-এ ফোন করেন। এছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার ঘাড়ের ধমনীতে কাঁপন দেখা গিয়েছিল, যা সম্ভবত উদ্বেগের একটি লক্ষণ ছিল।

তদন্তকারীরা রাইন্ডারনেখটের গাড়ি থেকে একটি লাইটার উদ্ধার করেছেন, যাতে তার ডিএনএ পাওয়া গেছে।

এই লাইটারটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে, রাইন্ডারনেখটকে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *