মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক দল-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলির উপর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা বিস্তারের এক গুরুত্বপূর্ণ চিত্র সম্প্রতি সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে এই শহরগুলিতে রক্ষণশীল নীতি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন ফেডারেল প্রোগ্রামের অর্থ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে শহরগুলিকে অভিবাসন, লিঙ্গ পরিচয় এবং জাতিগত বৈচিত্র্যের মতো বিষয়গুলোতে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করতে চাপ সৃষ্টি করছে।
এই কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে, প্রশাসন কয়েক বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে, যে সমস্ত শহর এই চাপ প্রত্যাখ্যান করতে চাইছে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা এবং আবাসন ও নগর উন্নয়ন বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে এই ধরনের শর্ত আরোপ করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপগুলির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। স্থানীয় সরকারগুলি অভিযোগ করেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের উপর এমন কিছু শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে যা তাদের এখতিয়ারের বাইরে এবং যা সংবিধানের পরিপন্থী। আদালত কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলির পক্ষে রায় দিয়েছে, তবে আইনি লড়াই এখনো চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপগুলি কেবল আইনি লড়াইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশল-এর অংশ। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়টিকে ব্যবহার করতে পারে।
এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মধ্যেকার সম্পর্ক। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী ফেডারেলিজম নীতির বিপরীত।
সাধারণত, রিপাবলিকানরা স্থানীয় সরকারগুলিকে যতটা সম্ভব ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু ট্রাম্প এক্ষেত্রে ভিন্ন পথে হেঁটেছেন। তিনি মনে করেন, ফেডারেল সরকারের বিশাল ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি তার রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে পারেন।
সামরিক শক্তি প্রয়োগও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছে, যা দৃশ্যমান প্রতিরোধের একটি অংশ। তবে, আর্থিক চাপ প্রয়োগের কৌশলটি সম্ভবত আরও বিস্তৃত এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থীর জয় হলে, শহরের বাজেট এবং ফেডারেল সহায়তার উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, নিউইয়র্কের বিশাল বাজেট এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ফেডারেল অনুদানের উপর নির্ভরশীল।
প্রশাসন এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে শহরগুলোতে তাদের নীতি চাপিয়ে দিতে চাইছে। এর মধ্যে রয়েছে, জাতিগত বৈচিত্র্য কর্মসূচি বন্ধ করা, ফেডারেল অভিবাসন আইন পুরোপুরি মেনে চলা, এবং “লিঙ্গ বিষয়ক ধারণা” অথবা “গর্ভপাতের অধিকার” বিষয়ক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা।
আদালত ইতোমধ্যে প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা বিভাগকে স্কুলের বৈচিত্র্য নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত অনুদান বন্ধ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। একইসাথে, “অভয়ারণ্য শহর”-গুলোতে তহবিল কমানোর বিরুদ্ধেও আদালত রায় দিয়েছে।
তবে প্রশাসন নতুন উপায়ে চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাগুলো আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্ব গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন