মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্জেন্টিনাকে বিশাল ঋণ: কারণ জানেন?

যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বিলিয়ন ডলারের জরুরি ঋণ: আর্জেন্টিনার পাশে ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত পদক্ষেপ

আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে এই পদক্ষেপ ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা অনেকের দৃষ্টিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর হাভিয়ের মেইলেই অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু গত মাসের নির্বাচনে তাঁর দলের পরাজয়ের পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়, যার ফলশ্রুতিতে দেশটির মুদ্রা দ্রুত দর হারায়। এমন পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে জানান, আর্জেন্টিনার সংকটপূর্ণ মুহূর্তে বাজার স্থিতিশীল রাখতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তাঁর প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে, আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি মুদ্রা বিনিময় চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশটি স্থানীয় মুদ্রা ডলারে রূপান্তর করতে পারবে। মূলত, এটিকে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এই সহায়তা প্রদানের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সমালোচকদের ধারণা, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে সুবিধাভোগী হবেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ধনী বিনিয়োগকারীরা। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কারণ, আর্জেন্টিনার বাজারে প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা চীন, যা মার্কিন কৃষকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন সময়ে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরকারি কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু সরকারি কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায়, বৈদেশিক সাহায্যের এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত।

অন্যদিকে, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এর মাধ্যমে তারা পশ্চিমা গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। তাঁর দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে কোনো ধনী আমেরিকান উপকৃত হবেন না।

আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আর্জেন্টিনার এই সংকট আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুর্বল হয়ে পড়লে, তার প্রভাব অন্যান্য দেশেও পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। একইসঙ্গে, বাংলাদেশের উচিত আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *