যুদ্ধ তীব্র! ইউক্রেন-রাশিয়ার জ্বালানি লড়াইয়ে বাড়ছে গ্যাস সংকট?

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি এখন জ্বালানি খাতেও বিস্তৃত হয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে গ্যাসের সংকট এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীর পর্যন্ত হামলা চালিয়ে সেখানকার তেল শোধনাগারগুলোতে আঘাত হানছে।

সম্প্রতি, রাশিয়ার বাশকোর্তোস্তান অঞ্চলের উফা শোধনাগারে হামলা চালানো হয়, যা গত এক মাসে এই স্থাপনায় তৃতীয় আঘাত। ইউক্রেনের সামরিক সূত্রগুলো বলছে, তারা ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেদের তৈরি করা দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে, যার ফলস্বরূপ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পেট্রোলের সংকট দেখা দিয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা বর্তমানে পূরণ করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, রাশিয়াও ইউক্রেনের গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এর ফলে ইউক্রেনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে এবং দেশটির গ্যাস উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ইউরোপ থেকে বেশি দামে গ্যাস আমদানি করতে হবে। এর ফলে তাদের উপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে।

গত সপ্তাহে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের ওডেসা অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল। রাজধানী কিয়েভেও আট লাখের বেশি গ্রাহক কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিডেনকো জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলাগুলো বিশেষভাবে জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল, যার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, শীতকালে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রায় ৪০০ কোটি ঘনমিটার গ্যাসের প্রয়োজন হবে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ২,২০,০০০ কোটি বাংলাদেশী টাকা)। এছাড়াও, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে।

ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী সভিতলানা গ্রিনচুক জানিয়েছেন, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৮0 কোটি ইউরোর (প্রায় ৮,৯০০ কোটি বাংলাদেশী টাকা, প্রতি ইউরো ১১১.২৫ টাকা ধরে) ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং আরও ঋণ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুদামগুলোতে বর্তমানে শীতের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রায় ৮৩ শতাংশ গ্যাস মজুদ রয়েছে। তবে, এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও, ভবিষ্যতের জন্য অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *