যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুল্ক বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কানাডার ভোক্তারা এখন আমেরিকান পণ্য বর্জন করতে শুরু করেছেন, যার ফলস্বরূপ দেশটির অনেক ব্যবসায়ে ধস নেমেছে। খবরটি মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিলতা এবং এর অপ্রত্যাশিত প্রভাবের একটি দৃষ্টান্ত।
ভার্জিনিয়া ডিস্টিলারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গ্যারেথ মুর জানান, তারা কানাডায় তাদের আমেরিকান সিঙ্গেল মাল্ট হুইস্কির ব্যবসা তিনগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। “হঠাৎ করেই যেন হুইস্কিটির স্বাদ ভালো লাগা বন্ধ হয়ে গেল, কারণ এটি আমেরিকা থেকে আসছিল,” তিনি বলেন। কানাডার অনেক প্রদেশে আমেরিকান স্পিরিট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা এখনো বহাল আছে।
শুধু হুইস্কিই নয়, এই বাণিজ্য বিরোধের কারণে পর্যটনের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। কানাডীয় পর্যটকদের অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রিসোর্ট এবং ভ্রমণ ব্যবসায় ধস নেমেছে। নিউ ইয়র্কের ব্লুফ পয়েন্ট গল্ফ রিসোর্টের মালিক পল ডেম জানান, সাধারণত তাদের দৈনিক খেলোয়াড়দের ৭০ শতাংশই ছিলেন কানাডিয়। কিন্তু এখন সেখানে কানাডিয়ানদের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে।
কানাডা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থলপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৩১ শতাংশ এবং আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ১৩ শতাংশ কমেছে। পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ব্লুফ পয়েন্ট গল্ফ রিসোর্ট কর্মীদের কাজের সময় কমিয়ে দিয়েছে।
মার্কিন-কানাডা সীমান্তের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে সিয়াটল ভিত্তিক ফেরি সার্ভিস ক্লিপার নেভিগেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক কলিন্স বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকির কারণে অনেক কানাডিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। কলিন্সের কোম্পানিও সীমান্ত পথে যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের সময়সূচী কমাতে এবং কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ সংস্থার প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী জিওফ ফ্রিম্যান জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেক বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অনীহা দেখা যাচ্ছে। টেক্সাস, ফ্লোরিডা এবং অ্যারিজোনার মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলো শীতকালে কানাডিয়ান পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। তাই তাদের জন্য এটা একটা বড় উদ্বেগের বিষয়।
আয়ওয়া অঙ্গরাজ্যের সিডার রিজ ডিস্টিলারির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ কুইন্ট জানান, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে তারা ইউরোপের বাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর তারা কানাডায় ব্যবসার দিকে মনোযোগ দেন, কিন্তু সেখানেও একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। কারণ কিছু কানাডীয় প্রদেশে আমেরিকান স্পিরিট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্টিলড স্পিরিটস কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কানাডায় আমেরিকান স্পিরিটসের রপ্তানি ৮৫ শতাংশ কমে গেছে।
যদিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তবে ব্যবসায়ীরা এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তাদের মতে, এই ধরনের শুল্ক এবং অস্থিরতা ব্যবসার জন্য খুবই ক্ষতিকর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন