যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় টেসলার স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ: বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা?
যুক্তরাষ্ট্রে টেসলার (Tesla) স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি (স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি) নিয়ে নতুন করে নিরাপত্তা বিষয়ক তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশটির ফেডারেল নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি এই প্রযুক্তির সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NHTSA) জানিয়েছে, টেসলার ‘ফুল সেলফ ড্রাইভিং’ (FSD) বা অন্যান্য ড্রাইভার সহায়তা প্রদানকারী ফিচারের কারণে হওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে।
এই পর্যন্ত, অন্তত ছয়টি পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে, যেগুলিতে লাল আলো লঙ্ঘন, ভুল পথে গাড়ি চালানো এবং তিনটি দুর্ঘটনায় পাঁচজন আহত হওয়ার মতো ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু এই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনো প্রযুক্তি বাজারে ছাড়ার আগে তার অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি নিজেরাই তাদের প্রযুক্তির মান পরীক্ষা করে এবং তা নিশ্চিত করে।
ফলে, টেসলার মতো দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, নিয়ন্ত্রকদের পক্ষে সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময়, সমস্যাগুলো সামনে আসার পরেই কেবল ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
স্ট্যানফোর্ড ল’ স্কুলের আইন ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান্ট ওয়াকার স্মিথ একে ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইঁদুর-দৌড়’ (regulatory whack-a-mole) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই ধরনের প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লেগে যায়।
এই পরিস্থিতিতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি যানবাহনের জন্য আরও কঠোর নিরাপত্তা মান নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু নতুন কোনো প্রযুক্তি রাস্তায় নামানোর আগে সেটির পরীক্ষা করার ক্ষমতা তাদের সীমিত।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (FAA)-এর মতো, কোনো নতুন প্রযুক্তি বাজারে ছাড়ার আগে অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা দিতে হলে, কংগ্রেসকে আইন পরিবর্তন করতে হবে।
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ওপর কোম্পানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বলে মনে করেন।
যদিও ‘ফুল সেলফ ড্রাইভিং’ এবং ‘অটোপাইলট’-এর মতো ফিচারগুলির ক্ষেত্রে, চালকদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয় এবং প্রয়োজনে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়।
তবে, টেসলা বর্তমানে এমন একটি পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে চালক ছাড়াই গাড়ি চলবে।
এই বছরের শুরুতে, তারা টেক্সাসের অস্টিনে এই পরিষেবা চালু করে।
যদিও শুরুতে, একজন টেসলা কর্মী সামনের আসনে বসেছিলেন, স্থানীয় নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে তাঁকে চালকের আসনে বসতে হয়।
মাস্কের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই এই পরিষেবাতে কোনো চালক থাকবে না এবং ‘সাইবারক্যাব’ (Cybercab)-এ ব্রেক, অ্যাক্সিলারেটর বা স্টিয়ারিং হুইলও থাকবে না।
তবে, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেসলা এখনও পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি, যা প্রমাণ করে যে তাদের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি মানুষের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
এমনকি, ‘ফুল সেলফ ড্রাইভিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময়, চালকের উপস্থিতিও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
অধ্যাপক স্মিথ মনে করেন, মানুষ যখন গাড়ি চালাচ্ছে না, শুধু দেখছে, তখন মনোযোগ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশে এখনো স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রচলন শুরু হয়নি।
তবে, প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রায়, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে।
নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আমাদের দেশেও নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ঝুঁকি তৈরি না হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন