যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা কিচেন ক্যাবিনেট ও অন্যান্য আসবাবপত্রের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে দেশটির নির্মাণ ও সংস্কার খাতে খরচ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে যেমন কিছু মার্কিন প্রস্তুতকারক লাভবান হতে পারেন, তেমনই অনেক ব্যবসার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। খবর অনুযায়ী, এই শুল্কগুলি মূলত বিদেশি উৎপাদকদের থেকে আসা সস্তা পণ্যকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সরকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক বাণিজ্য নীতির কথা উল্লেখ করে এই শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে কিচেন ক্যাবিনেট ও বাথরুম ভ্যানিটির ওপর সবচেয়ে বেশি শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত এইগুলির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, আর নতুন বছর থেকে তা বেড়ে সরাসরি ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে।
এছাড়া, আসবাবপত্রের অন্যান্য অংশের ওপরও শুল্ক বসানো হয়েছে। যেমন, চেয়ার, সিট ও সোফার মতো কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, যা ১লা জানুয়ারি থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছবে।
শুধু তাই নয়, পাইন ও সিডার গাছের মতো নরম কাঠ (softwood timber) ও কাঠের ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিদেশি ক্যাবিনেট সরবরাহকারী দেশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলি উল্লেখযোগ্য।
তবে, কিছু দেশের ক্ষেত্রে শুল্কের হারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের থেকে আসা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের কাঠ ও কাঠের পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্কের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। ইউবিএস ব্যাংকের বিশ্লেষক জন লাভালোর মতে, আমদানি শুল্কের কারণে একটি সাধারণ পরিবারের বাড়ি তৈরি করতে প্রায় ২৮০ ডলার বেশি খরচ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী আপাতত গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি দাম না নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তবে, বাজারের চাহিদা কমে গেলে অনেককে দাম বাড়াতে হতে পারে।
এই শুল্ক কাঠ ও কাঠের পণ্যের বাজারে সরবরাহকেও প্রভাবিত করতে পারে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেসন মিলারের মতে, এর ফলে ব্যবসায়ীরা সীমিত সংখ্যক পণ্য আমদানি করতে বাধ্য হবেন, যা বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য কমিয়ে দেবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ক্যাবিনেট প্রস্তুতকারক সংস্থা উপকৃত হতে পারে। তারা বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করবে।
তবে, অনেক ব্যবসার মতে, তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল আন্তর্জাতিক হওয়ায় এই শুল্ক তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলের একটি ক্যাবিনেট প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, তারা তাদের পণ্যের জন্য এশিয়া ও ইউরোপ থেকে প্লাইউড ও মেলামাইন বোর্ড আমদানি করে।
তাদের মতে, এই শুল্ক তাদের ব্যবসা পরিচালনায় খরচ বাড়াবে।
এই পরিস্থিতিতে, নির্মাণ ও আসবাবপত্রের বাজারের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, শুল্কের কারণে একদিকে যেমন পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তেমনই বাজারে প্রতিযোগিতাও কমতে পারে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস