টিকটক কেনার চেষ্টা করা সেই বিলিয়নেয়ারের চাঞ্চল্যকর পদক্ষেপ!

চীনের একটি কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড় চলছে। এবার এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন মার্কিন বিলিয়নেয়ার ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্ট।

টিকটক কেনার দৌড়ে একসময় তিনিও ছিলেন, এখন তিনি অ্যাপটির আমেরিকান অংশের মালিকানা বিষয়ক চুক্তির বৈধতা খতিয়ে দেখছেন।

জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের মধ্যস্থতায় টিকটকের আমেরিকান সম্পদ কেনার জন্য একটি চুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই চুক্তিতে বিনিয়োগকারী একটি মার্কিন দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্ট এখন এই চুক্তির আইনি দিকগুলো বিশ্লেষণ করছেন। তিনি দেখছেন, এই চুক্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সিএনএন-এর ‘টার্মস অফ সার্ভিস’ পডকাস্টে ম্যাককোর্ট জানান, চুক্তির খুঁটিনাটি এখনো তার কাছে স্পষ্ট নয়। তিনি মনে করেন, এই বিষয়ে আমেরিকান জনগণের আরও বেশি কিছু জানার অধিকার আছে।

ম্যাককোর্টের দল প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। তারা দেখছে, গত বছর পাস হওয়া ‘সেল-অর-ব্যান’ আইনটি এই চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের সমাধান হয়েছে কিনা।

উল্লেখ্য, টিকটককে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। মূলত, ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি এখানে প্রধান। কারণ, টিকটক ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে থাকে।

এই ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। টিকটকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য চীনের হাতে চলে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে এর মালিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে।

গত বছর টিকটক কেনার জন্য ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্ট, কেভিন ও’লিয়ারি এবং অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান-এর একটি দল আগ্রহ দেখিয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, টিকটকের বিখ্যাত অ্যালগরিদম ছাড়াই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাপটি তৈরি করা।

ম্যাককোর্টের ‘প্রজেক্ট লিবার্টি’ নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডেটার ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

হোয়াইট হাউস অবশ্য অন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ওরাকল, সিলভার লেক, ডেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ডেল এবং লাচলান মারডকের ফক্স কর্পোরেশন-এর মতো বিনিয়োগকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে টিকটক বিক্রি করার কথা ভাবা হচ্ছে।

যদিও ম্যাককোর্ট এখনো তার পুরনো লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর যুগে অনলাইনে মানুষের ডেটা সুরক্ষার জন্য প্রযুক্তি তৈরির চেষ্টা করছেন।

ম্যাককোর্টের মতে, বৃহৎ প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ডেটা সংগ্রহ করে, বিশ্লেষণ করে এবং সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে ও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের প্রভাবিত করছে। তিনি মনে করেন, ডিজিটাল যুগে আমাদের ডেটাই আমাদের পরিচয়।

ব্যবহারকারীর ডেটার ওপর তাদের অধিকার থাকা উচিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই আদেশে বলা হয়েছে, টিকটক-সংক্রান্ত চুক্তিটি ‘কোয়ালিফাইড ডাইভেস্টিচার’ হিসেবে বিবেচিত হবে, যা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।

তবে চুক্তির বিস্তারিত এখনো অজানা। নতুন মালিকানা গ্রুপ কীভাবে বাইটড্যান্স থেকে টিকটকের অ্যালগরিদম ব্যবহারের লাইসেন্স নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এছাড়াও, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের সমাধান কীভাবে করা হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই গ্রুপ বাইটড্যান্স থেকে অ্যালগরিদমের একটি কপি পাবে এবং সেটিকে মার্কিন ব্যবহারকারীর ডেটা দিয়ে পুনরায় প্রশিক্ষণ দেবে।

ওরাকল এই অ্যালগরিদম কীভাবে ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট সরবরাহ করে, তা পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানা গেছে।

ম্যাককোর্ট সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই দেশে আইনের শাসন এখনো বহাল আছে।”

ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্ট

টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে ম্যাককোর্টের পরিকল্পনা।

টিকটক নিয়ে কাজ করার সময় ‘প্রজেক্ট লিবার্টি’ যে প্রযুক্তি তৈরির পরিকল্পনা করেছিল, সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ম্যাককোর্ট এখন একটি ব্যক্তিগতকৃত এআই এজেন্ট তৈরি করতে চাইছেন। এটি ব্যবহারকারীর ডেটা কোথায় এবং কীভাবে শেয়ার করা হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করবে।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যবহারকারী যদি এআই চ্যাটবটের সঙ্গে পাহাড় ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন, তাহলে তিনি হয়তো সেই কথোপকথনের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুষার বুটের বিজ্ঞাপন দেখতে রাজি হতে পারেন। আবার, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের ক্ষেত্রে তিনি ডেটা শেয়ার করতে নাও চাইতে পারেন।

ম্যাককোর্ট আরও চান, যখন ব্যবহারকারীর ডেটা ব্যবহার করে কিছু বিক্রি করা হবে, তখন সেই লাভের একটা অংশ যেন ব্যবহারকারীরাও পান।

এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীর অনলাইন আচরণের ভিত্তিতে যে তথ্য সংগ্রহ করে, তার চেয়ে এআই চ্যাটবটের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মেটা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা তাদের এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে পাওয়া ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করে তাদের জন্য আরও উপযুক্ত বিজ্ঞাপন দেখাবে।

প্রজেক্ট লিবার্টির এই মডেল এখনো নির্মাণাধীন এবং ব্যবহারকারীরা কীভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ম্যাককোর্ট এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি যে, তারা কোনো বড় এআই কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা।

তবে তিনি মনে করেন, যারা তার ইন্টারনেট বিষয়ক ধারণা সমর্থন করবে, তাদের জন্য এখানে প্রচুর অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *