বুড়ো বয়সেও কি লড়াই চলে? ডেমোক্র্যাটদের জন্য উদ্বেগের কারণ!

রাজনৈতিক অঙ্গনে বয়স কি একটি সমস্যা? যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিগুলোতে (প্রাথমিক নির্বাচন) এই প্রশ্নটিই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। অভিজ্ঞতার প্রশ্নে প্রবীণ রাজনীতিকদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের নেতাদের ক্ষমতার লড়াই জমে উঠেছে, যা নির্বাচকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।

আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবীণ ও তরুণ নেতাদের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্ব বিশেষভাবে চোখে পড়ছে কয়েকটি রাজ্যে। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে মেইন রাজ্যের সিনেট নির্বাচন। এখানে ৭৭ বছর বয়সী গভর্নর জ্যানেট মিলস রিপাবলিকান সিনেটর সুজান কলিন্সের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

কলিন্সের বয়স ৭২ বছর। যদি মিলস জয়লাভ করেন, তবে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক প্রথম মেয়াদের সিনেটর।

পেনসিলভানিয়ার সাবেক কংগ্রেসম্যান সুজান ওয়াইল্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মন্তব্য করেছেন, “জ্যানেট মিলস আমার চেয়ে দশ বছরের বড়। এখন আমি ভাবছি, কেন আমি আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবিনি। কারণ আমি কংগ্রেসের এই বয়স-সমস্যার অংশ হতে চাই না।”

অন্যদিকে, ম্যাসাচুসেটসে ৪৬ বছর বয়সী কংগ্রেসম্যান সেথ মলিটন ৭৯ বছর বয়সী প্রগতিশীল সিনেটর এড মার্কেইকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা ভাবছেন। মার্কেই বর্তমানে সিনেটে ৫০ বছর অতিবাহিত করেছেন।

এছাড়া, ওয়াশিংটন ডিসিতে ৮৬ বছর বয়সী ডেলিগেট (অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি) এলিয়েনর হেমস নর্টনও বেশ কয়েকজন প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার প্রভাবশালী ডেমোক্রেট নেতা ও সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং প্রতিনিধি ব্র্যাড শেরম্যানের বিরুদ্ধেও ডেমোক্রেটিক দলের অন্য প্রার্থীরা মনোনয়ন লাভের জন্য লড়ছেন। নিউ ইয়র্কের জেরি ন্যাডলার এবং ইলিনয়ের জ্যান শ্যাকোওস্কি-এর মতো প্রবীণ নেতারা তরুণ প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে পড়লে আসন্ন নির্বাচনে তাদের অবসরের ঘোষণা করতে হতে পারে।

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনেও এই বয়সের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখানে ৩৩ বছর বয়সী প্রগতিশীল প্রার্থী জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর ৬৭ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু কূমোর মুখোমুখি হয়েছেন। কূমো যদিও প্রাইমারিতে মামদানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন, তবুও তিনি আবার নির্বাচনে ফিরতে চাইছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে ডেমোক্রেটদের জন্য পুরনো কৌশল কাজে দেবে না। তরুণ প্রজন্মের নতুন ভাবনা ও উদ্যম প্রয়োজন। ভোটাররা চান নতুন নেতৃত্ব, যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করবে এবং আমেরিকার জন্য একটি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করবে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কয়েকজন ডেমোক্রেট এখনো সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এমনকি বিচারপতি রুথ Bader Ginsburg এর মৃত্যুর বিষয়টিও আলোচনায় আসছে।

কারণ তাঁর মৃত্যুর কারণে ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করতে সুযোগ পেয়েছিলেন।

মেইন রাজ্যের গভর্নর জ্যানেট মিলস বলছেন, তিনি সুজান কলিন্স ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্পের সময়ে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।

তবে, মিলসের এই প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তের সময় নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কারো কারো মতে, তিনি হয়তো এই লড়াইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নন। যদিও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে মিলসকে সমর্থন করছেন না, তবে অনেকেই মনে করেন, সাধারণ নির্বাচনে কলিন্সের বিরুদ্ধে মিলসই শক্তিশালী প্রার্থী।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *