ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাসে বেড়ালের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, সেখানকার প্রতি জন বাসিন্দার জন্য একটি করে বিড়াল রয়েছে! দেশটির পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের বাস এই দ্বীপে, আর সেখানে প্রায় ১০ লক্ষের বেশি বন্য বিড়াল ঘোরাঘুরি করে।
বিষয়টি এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সমাধানে দেশটির সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, বিড়ালদের নির্বীজন কর্মসূচীর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
বর্তমানে এই খাতে বছরে ১ লক্ষ ইউরো (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার সমান) খরচ করা হয়। এইবার তা বাড়িয়ে ৩ লক্ষ ইউরো (প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
তাদের মতে, একটি সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সেখানকার পরিবেশ বিষয়ক কমিশনার আন্তোনিয়া থিওডোসির মতে, বিদ্যমান নির্বীজন কর্মসূচিটি ভালো, তবে এর আরও প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।
সাইপ্রাসের মানুষের সঙ্গে বিড়ালের সম্পর্ক বহু পুরোনো।
ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রায় ৯,৫০০ বছর আগের একটি প্রাচীন গ্রামে মানুষের কঙ্কালের পাশেই বিড়ালের কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়াও, চতুর্থ শতকে সেন্ট হেলেন নামের এক সন্ন্যাসিনী সাপ তাড়ানোর জন্য প্রচুর বিড়াল নিয়ে এসেছিলেন।
এখনো সেখানে ‘সেন্ট নিকোলাস অফ দ্য ক্যাটস’ নামে একটি মঠ বিদ্যমান, যা বিড়ালদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত।
পর্যটকদের কাছেও সাইপ্রাসের বিড়ালগুলো বেশ জনপ্রিয়। অনেক পর্যটকদের খাবার দেওয়া বিড়ালগুলোর নিয়মিত দৃশ্য সেখানে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অতিরিক্ত প্রজননের কারণেই মূলত বিড়ালের সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
পশুচিকিৎসা সমিতির প্রেসিডেন্ট ডিমিত্রিজ এপামিনোন্ডাস জানান, একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে, আগামী চার বছরের মধ্যে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তিনি এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সমিতির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
যেখানে বিড়ালদের একত্র করে তাদের নির্বীজন করার জন্য পশুচিকিৎসা কেন্দ্র চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও, একটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে, যার মাধ্যমে যে কেউ বিড়ালের সংখ্যা বেশি আছে এমন স্থান চিহ্নিত করতে পারবে।
সাইপ্রাসের এই সমস্যাটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ প্রাসঙ্গিক।
আমাদের দেশেও রাস্তার কুকুর এবং অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জনস্বাস্থ্য এবং প্রাণী কল্যাণের বিষয়টি মাথায় রেখে, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে, হয়তো এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস