মার্কিন চাপের মুখে: ডাচ কোম্পানির উপর চীনের নিয়ন্ত্রণ!

**মার্কিন-চীন প্রযুক্তি যুদ্ধের শিকার নেদারল্যান্ডসের একটি চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি**

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলা প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের একটি চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি – এর নাম নেক্সপেরিয়া – জড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে দেশটির সরকার সম্প্রতি এই কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বাজারের জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর এর প্রভাব আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের নিজমেগেন শহরে অবস্থিত নেক্সপেরিয়া মূলত কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল এবং শিল্পখাতে ব্যবহৃত নিম্ন-শ্রেণীর চিপ তৈরি করে। তাদের জার্মানি ও যুক্তরাজ্যেও চিপ তৈরির কারখানা রয়েছে।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, নেক্সপেরিয়ার মালিক চীনা নাগরিক ঝ্যাং জুয়েঝেং-কে (Zhang Xuezheng) যদি বহাল রাখা হয়, তাহলে কোম্পানিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হুমকি সৃষ্টিকারী’ কোম্পানির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণে ডাচ সরকার কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এই ঘটনার পর ঝ্যাং জুয়েঝেং-কে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ গত সেপ্টেম্বরে রফতানি নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে, যে সকল কোম্পানির ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা ‘হুমকি সৃষ্টিকারী’ কোম্পানির হাতে, তাদের ওপরও একই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। নেক্সপেরিয়া যেহেতু চীনের উইংটেক নামক একটি কোম্পানির সম্পূর্ণ মালিকানাধীন, তাই তারাও এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে। উইংটেক-এর আবার আংশিক মালিকানা রয়েছে চীন সরকারের।

চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা এটিকে বাণিজ্য যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার শামিল হিসেবে দেখছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও তাদের দেশের বাইরে কিছু উপাদান রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা নেক্সপেরিয়ার জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, নেদারল্যান্ডসের অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় নেক্সপেরিয়াকে সতর্ক করে জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫০ শতাংশের নিয়ম’ তারা কার্যকর করতে পারে। ডাচ সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, নেক্সপেরিয়ার ইউরোপীয় কার্যক্রম “অগ্রহণযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত” হচ্ছে এবং এর ফলে ইউরোপীয় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় চিপের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নেক্সপেরিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা মার্কিন রফতানি নিয়ন্ত্রণ নীতির মোকাবিলায় একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে, তারা চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে, যাতে তাদের ওপর থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

এদিকে, নেক্সপেরিয়ার মূল কোম্পানি উইংটেক ডাচ সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। উইংটেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে তাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা আসলে ‘ভূ-রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা’র ফল।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ এক সম্পাদকীয়তে নেদারল্যান্ডসের এই পদক্ষেপকে ‘খুবই বিদ্বেষপূর্ণ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক রীতিনীতির চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই প্রযুক্তি যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। উন্নত প্রযুক্তি এবং সেমিকন্ডাক্টর চিপের ওপর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর নির্ভরতা অনেক। এমন পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *