যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে নতুন মেরুকরণ: ট্রাম্পের সার্জন জেনারেল প্রার্থী কি পারবেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে?
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের সার্জন জেনারেল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডা. কেইসি মিন্সকে। এই সিদ্ধান্তের পরেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকের মনে প্রশ্ন, এই পদে থেকে ডা. মিন্স কি পারবেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তিনি কি পারবেন রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের ‘মেকিং আমেরিকা হেলদি এগেইন’ (MAHA) আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে?
যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল পদটি দেশটির স্বাস্থ্যখাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে। এই পদের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারণ এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করা হয়। অতীতে এই পদের কর্মকর্তারা অ্যালকোহল পণ্যের মোড়কে সতর্কীকরণ থেকে শুরু করে ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের জন্য কাজ করেছেন।
ডা. কেইসি মিন্সকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মূল কারণ হলো তাঁর কিছু বিতর্কিত স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণা। তিনি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে বিকল্প চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বিশেষভাবে ভ্যাকসিন এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহারের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়গুলো ‘মেকিং আমেরিকা হেলদি এগেইন’ (MAHA) আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যা প্রচলিত বিজ্ঞান থেকে কিছুটা ভিন্ন।
ডা. মিন্সের এই মনোনয়ন নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর যোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর এই পদে আসার ফলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সার্জন জেনারেল, ড. জেরোম অ্যাডামসও মিন্সের এই মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডা. মিন্সের মনোনয়ন একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ, তিনি একদিকে যেমন জনগণের কাছে স্বাস্থ্য বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিতে চান, তেমনই আবার ভ্যাকসিন বিরোধী এবং বিতর্কিত ধারণার কারণে সমালোচিত হচ্ছেন। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টর সমর্থক এবং কেনেডি শিবিরের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ডা. মিন্সের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তাঁর স্বার্থের সংঘাতের সম্ভাবনা। তিনি একটি স্বাস্থ্য প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাঁর পরিবার কিছু তামাক প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। সমালোচকদের মতে, সার্জন জেনারেল পদে আসীন হলে তিনি এই পদ ব্যবহার করে নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করতে পারেন।
তবে, ডা. মিন্স এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি ইতিমধ্যে তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন এবং সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবেন।
ডা. কেইসি মিন্সকে নিয়ে বিতর্ক এখন স্বাস্থ্যখাত ছাড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর এই মনোনয়ন যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য নীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, সেদিকে এখন সবার নজর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন