যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ট্রাম্পের শাসনামলে বিতর্ক: পদত্যাগ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, যা দেশটির আইনের শাসন রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বেশ কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কালে বিচার বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের পদত্যাগ এবং অপসারণের ঘটনাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এসব ঘটনার কারণ হিসেবে অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রম এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকজন সরকারি কৌঁসুলি ও আইনজীবীকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এই পদক্ষেপগুলোর পেছনে মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অভিপ্রায়।
বিশেষ করে, সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি এবং নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চাপানো অভিযোগগুলো এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জেলার ঘটনা। এখানে, সরকারি কৌঁসুলি এরিক সিবার্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সিবার্টকে ট্রাম্পের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করার কারণেই মূলত সরানো হয়েছিল বলে জানা যায়। এরপর ট্রাম্পের অনুগত হিসেবে পরিচিত লিন্ডসে হ্যালিগানকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি পরবর্তীতে জেমস ও কোমির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আনেন।
এছাড়াও, এই জেলা থেকে আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ কৌঁসুলিকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ঘটনাও একই ধরনের ইঙ্গিত বহন করে। এখানে সরকারি কৌঁসুলি টড গিলবার্টকে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন চেয়েছিল গিলবার্টের ডেপুটিকে সরিয়ে দিতে, কারণ তিনি কিছু মামলার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
নিউ ইয়র্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এখানে, অন্তত সাতজন কৌঁসুলি তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এদের মধ্যে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারি কৌঁসুলি ড্যানিয়েল সাসুন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে এমন কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যা নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনার পরিপন্থী ছিল।
এছাড়াও, সহকারী সরকারি কৌঁসুলি হেগান স্কটেন তীব্র ভাষায় এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে পদত্যাগ করেন।
ওয়াশিংটন ডিসির সরকারি কৌঁসুলি অফিসের একজন শীর্ষস্থানীয় কৌঁসুলি ডেনিস চিয়াং-ও পদত্যাগ করেন। তিনি বাইডেন প্রশাসনের একটি তহবিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে তদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানালে তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
মার্চ মাসে আরেকজন কৌঁসুলি শন পি. মারফি পদত্যাগ করেন। তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ করেন।
এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অনেক সমালোচক মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আইনের শাসনের প্রতি চরম আঘাত ছিল।
তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর ফলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন