যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ১৯৬৪ সালের ঐতিহাসিক ভোটাধিকার আইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলছে। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
বিচারপতি ব্রেট কাভানাফের হাতেই যেন এখন এই আইনের ভাগ্য, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
লুইজিয়ানার একটি মামলার শুনানিতে কাভানাফ এই আইনের কিছু অংশে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশেষ করে, ‘মেজরিটি-মাইনরিটি’ জেলা তৈরি করার ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত কিনা, সেই বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
এই ধরনের জেলাগুলো সাধারণত এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতানোর সুযোগ থাকে।
কাভানাফ এর আগে আলাবামার একটি মামলায়ও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এবং কাভানাফ মিলে এর আগে এই আইনের কিছু অংশ বহাল রেখে একটি সমঝোতায় এসেছিলেন।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
বিচারপতি কাভানাফ জানতে চেয়েছেন, সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচনী এলাকাগুলো তৈরির ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা থাকা উচিত কিনা। তিনি মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবস্থা ‘দীর্ঘকাল’ ধরে চলতে পারে না।
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থা এবং আইন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই আইনের দুর্বলতা সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাদের মতে, এই আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো তাদের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আদালতে শুনানিতে, কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের প্রতিনিধিত্বের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, যদি এই আইন দুর্বল করা হয়, তবে এর ফলস্বরূপ কংগ্রেসে এবং রাজ্যের বিভিন্ন পদে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে।
এর ফলে, ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা বাড়বে।
মামলার শুনানিতে লুইজিয়ানার একটি জেলার নির্বাচনী মানচিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজ্যের আইনসভা কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের একটি আসনে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, যাতে তাদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
আদালতে বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, যদি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন মানচিত্র তৈরি করে, যেখানে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব হয়, তাহলে কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
এই মামলার রায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এটি ভোটাধিকার, সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণের মতো মৌলিক বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মামলার রায় হয়তো একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করবে, যা ভোটাধিকার আইনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এবং সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এই রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন