যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ICE (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট)-এর বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিবাসন বিরোধী অভিযানে আগ্রাসী কৌশল অবলম্বনের অভিযোগ উঠেছে, যা বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ICE কিভাবে কাজ করছে এবং এর প্রভাব কী, তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জানা গেছে, ICE প্রায়ই অভিবাসীদের আটকের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ম্যানহাটনের একটি অভিবাসন আদালতে একজন নারীকে এক ICE এজেন্টের ধাক্কা দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে, যেখানে দেখা যায়, ওই নারী তার স্বামীকে আটকের সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্র ও জনবহুল স্থানগুলোতেও অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনায় ICE কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অবশ্য ICE-এর পক্ষ সমর্থন করে বলছে, তারা কেবল গুরুতর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে। তাদের মতে, এজেন্টরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।
তবে, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মকর্তাদের ওপর দ্রুত গ্রেপ্তারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চাপ থাকায় তারা আগ্রাসী কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সামান্য অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদেরও আটক করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত মাসে একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে কয়েকশ’ শ্রমিককে আটক করা হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল কোরীয় নাগরিক। এছাড়াও, বিভিন্ন শহরে ICE-এর উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসী কমিউনিটিতে ভীতি তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ICE-এর আগ্রাসী কার্যক্রমের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংস্থাটির প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মুখ ঢাকা থাকার কারণে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা অভিযোগকারীদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।
অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা কর্মকর্তাদের সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে, সমালোচকরা বলছেন, এর ফলে কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা কমে যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসন ইস্যুতে রাজনৈতিক চাপও ICE-কে প্রভাবিত করছে। কিছু শহরে আশ্রয় নীতি বিদ্যমান থাকায় ICE কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়াও, সীমান্ত পারাপার কমে যাওয়ায় ICE কর্মীরা এখন অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের ওপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ICE-এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংস্থাটি বর্তমানে বিশাল পরিমাণ ফেডারেল তহবিল পাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করতে সহায়ক হবে।
এই পরিস্থিতিতে, অভিবাসন বিরোধী নীতির কারণে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন