মাদাগাস্কারে সামরিক অভ্যুত্থান, ক্ষমতা দখল করে নিলেন সেনা কর্নেল।
আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, মাদাগাস্কারে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছেন এক সামরিক কর্নেল। দেশটির প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে এখন নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন কর্নেল মাইকেল র্যাঁদ্রিয়ানিরিনা।
খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর।
গত শুক্রবার দেশটির প্রধান বিচারালয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কর্নেল র্যাঁদ্রিয়ানিরিনা। এর আগে, গত তিন দিন ধরে চলা অস্থিরতার পর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের ঘোষণা আসে।
ক্ষমতা হারানোর পর মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্ড্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে তার বর্তমান অবস্থান এখনো অজানা।
জাতিসংঘ (United Nations) এই সামরিক অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং আফ্রিকার ইউনিয়ন (African Union) মাদাগাস্কারকে তাদের কার্যক্রম থেকে স্থগিত করেছে।
মূলত, তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জের ধরেই এই অভ্যুত্থান ঘটে। বিক্ষোভকারীরা নিয়মিত বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ, দুর্নীতি এবং সুযোগের অভাবের মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
জানা যায়, ক্ষমতা দখলের আগে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনাকে অভিশংসন করা হয়েছিল।
কর্নেল র্যাঁদ্রিয়ানিরিনা, যিনি আগে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন, অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। এর আগে, তিনি বিদ্রোহের চেষ্টা করার অভিযোগে দু’বছর আগে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কারাবন্দী ছিলেন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, মাদাগাস্কারের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে।
অতীতে এখানে বেশ কয়েকবার সামরিক অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে। ২০০৯ সালেও সামরিক সমর্থনপুষ্ট এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজোয়েলিনা ক্ষমতা দখল করেছিলেন।
কর্নেল র্যাঁদ্রিয়ানিরিনা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে ১৮ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত একটি সামরিক পরিষদ দেশ চালাবে।
অর্থাৎ, যারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল, তাদের নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।
গত মাসে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভগুলোতে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য দেশের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
প্রথমে জল ও বিদ্যুতের অভাব নিয়ে রাস্তায় নামলেও, বিক্ষোভকারীরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, সুযোগের অভাব এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
কর্নেল র্যাঁদ্রিয়ানিরিনা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সামরিক অভ্যুত্থান ছিল “নাগরিক ও দেশপ্রেমিক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার” একটি পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন দেশকে তার আগের গৌরবে ফিরিয়ে আনব, নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং ধীরে ধীরে মালগাসি জনগণের সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মাদাগাস্কারে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের নিন্দা করে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মাদাগাস্করের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশগুলো এই সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)