আর্জেন্টিনায় মিলের অর্থনীতি: ট্রাম্পের সাহায্যের পরও কি সঙ্কট?

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কঠিন অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন হাভিয়ের মিলেই। কিন্তু তাঁর এই নীতিমালার কারণে দেশটির শিল্পখাতে দেখা দিয়েছে চরম সংকট।

অন্যদিকে যেমন ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, তেমনই বাড়ছে বেকারত্ব। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতিকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের সম্ভাব্য সহায়তার বিষয়টি দেশটির আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের বাইরে, শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত একটি এলাকার অনেক কারখানাই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় যেখানে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা ছিল, সেখানে এখন শুনশান নীরবতা।

টেক্সটাইল মিলের মালিক লুসিয়ানো গালফিয়োন জানান, তাঁর কারখানায় উৎপাদন প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে, এমনকি পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে নিজের সঞ্চয়ও খরচ করতে হচ্ছে তাঁকে।

ফান্ডেশন প্রো তেজের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে ১৭,৬০০-এর বেশি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে ১,৮০০টি ছিল উৎপাদনকারী এবং ৩৮০টি টেক্সটাইল কোম্পানি। গালফিয়োন নিজেও এই ফাউন্ডেশনের প্রধান।

তাঁর মতে, শুধু টেক্সটাইল নয়, এই সংকট আরও বিস্তৃত এবং দ্রুতই অন্যান্য শিল্পও এর শিকার হবে।

আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মাইলেইয়ের নীতির ওপর ভোটারদের রায় দেওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনার বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে।

অন্যদিকে যেমন পণ্যের চাহিদা কমছে, তেমনি বাড়ছে আমদানি করা পণ্যের চাপ। বিশেষ করে চীন থেকে আসা সস্তা পণ্যের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছেন না।

এই পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দেশটির জন্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিতে পারেন।

তবে এই সহায়তা নির্ভর করছে নির্বাচনে মাইলেইয়ের সাফল্যের ওপর।

তবে অনেকেই মনে করছেন, এই সাহায্য তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। বুয়েনস আইরেসের এক বাসিন্দা ওয়াল্টার উইল্যাট বলেন, “বিদেশ থেকে টাকা পেলে কী হবে? যদি দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে হয়, তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদার দিকে নজর দিতে হবে।”

আর্থিক সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট মাইলেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন, যা একসময় বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু এখন মানুষের মনে নতুন উদ্বেগের জন্ম হয়েছে।

বুয়েনস আইরেস প্রদেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে, বেতন কমেছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।

রাজনৈতিক ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা হরাইজন এনগেজের পরিচালক মার্সেলো জে. গার্সিয়ার মতে, “এখন মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। অর্থনীতিকে বাড়াতে হবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সরকার সেই চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”

আর্জেন্টিনার এই অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশটির সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে বিদেশি পণ্যের প্রবেশ সহজ হয়েছে।

বিশেষ করে চীন থেকে আসা সস্তা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর ট্যাক্সের বোঝা রয়েই গেছে, ফলে তাঁদের পক্ষে উৎপাদন খরচ কমানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

আর্জেন্টিনার এই সংকটকালে দেশটির শিল্পখাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং বাণিজ্য নীতিতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *