চাকরি ছাড়লে কোম্পানিকে টাকা দিতে হয়? কারণ শুনলে চমকে যাবেন!

চাকরি ছাড়লে কি কোম্পানিকে টাকা ফেরত দিতে হয়?

অধিকাংশ মানুষ কাজের শুরুতে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে চাকরি ছাড়ার সময় কিছু টাকা ফেরত দিতে হতে পারে।

বিষয়টি অনেকের কাছেই হয়তো অজানা। সাধারণত ‘স্টে-অর-পে’ চুক্তির (stay-or-pay agreement) আওতায় এমনটা ঘটে থাকে। এই চুক্তিতে উল্লেখ থাকে যে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে চাকরি ছাড়লে কর্মীদের কিছু সুবিধা বাবদ কোম্পানির দেওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে।

সাধারণত কর্মীদের আকর্ষণ করতে অথবা ধরে রাখতে কোম্পানিগুলো কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—যোগদানকালীন বোনাস, পদোন্নতি বোনাস, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য অর্থ প্রদান এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। কর্মীদের সুবিধা দেওয়ার পেছনে কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য থাকে কর্মীদের ধরে রাখা এবং ব্যবসার উন্নতি করা। কিন্তু কর্মী যদি সুবিধাগুলো নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন, তাহলে কোম্পানির বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কারণ, কর্মী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে ‘স্টে-অর-পে’ চুক্তিকে কর্মীদের অধিকার খর্ব করার একটি কৌশল হিসেবেও দেখা হয়। বিশেষ করে কম আয়ের কর্মীদের ক্ষেত্রে এবং প্রশিক্ষণ বাবদ অর্থ পরিশোধের চুক্তিতে এটি বেশি দেখা যায়।

সেটিকে অনেক সময় ‘ট্রেনিং রিপেমেন্ট এগ্রিমেন্ট’ (TRAP) বা প্রশিক্ষণ পরিশোধ চুক্তিও বলা হয়। এমন চুক্তির মাধ্যমে কর্মীদের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণের মান বা প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করেই কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চাকরি ছাড়লে, সেই প্রশিক্ষণের খরচ ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়। এমনটা হলে কর্মীদের অন্য চাকরি খোঁজার স্বাধীনতা সীমিত হয়ে আসে।

উদাহরণস্বরূপ, কর্মীদের অন্য কোনো চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করার শর্ত থাকতে পারে। যদিও এমন চুক্তি সব সময় কার্যকর করা হয় না, তবে এর অস্তিত্ব কর্মীদের মধ্যে চাকরি ছাড়ার বিষয়ে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করে। যার ফলে তারা ভালো সুযোগ পেলেও অন্য কোথাও যেতে দ্বিধা বোধ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, ঠিক কতজন কর্মী এই ধরনের চুক্তির আওতায় আছেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া কঠিন। তবে ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান, কর্নেল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের গবেষকদের মতে, এই ধরনের চুক্তি—যেখানে চাকরির প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে এমবিএ প্রোগ্রামের খরচ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত থাকে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১১ জন কর্মীর মধ্যে ১ জনকে (৮.৭%) প্রভাবিত করতে পারে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯০-এর দশকে প্রকৌশলী, সিকিউরিটি ব্রোকার এবং বিমান চালকের মতো উচ্চ-দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের জন্য টিআরএপি’র ব্যবহার শুরু হয়।

বর্তমানে এই ধরনের চুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন এবং খুচরা ব্যবসার মতো কম ও মাঝারি আয়ের শিল্পগুলিতেও সাধারণ হয়ে উঠেছে, যেখানে নারী ও সংখ্যালঘুদের আধিপত্য বেশি।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে এই সংক্রান্ত একটি নতুন আইন পাস হয়েছে। এই আইনে কিছু ‘স্টে-অর-পে’ বিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অন্যগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই আইনটি ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

নতুন আইন অনুযায়ী, ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক নিয়োগকর্তারা কর্মীদের কাছ থেকে চাকরির প্রশিক্ষণ বাবদ অর্থ ফেরত চাইতে পারবে না। তবে শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।

এছাড়াও, কোনো কর্মীকে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা হলে বা তাঁর পদ বিলুপ্ত করা হলে, কোম্পানি কোনো সুবিধা বাবদ অর্থ ফেরত চাইতে পারবে না।

তবে, নতুন আইন কিছু শর্ত সাপেক্ষে নিয়োগকর্তাদের কিছু ধরনের ‘স্টে-অর-পে’ চুক্তি করার অনুমতি দেয়। এর মধ্যে অনুমোদিত শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামগুলির পাশাপাশি, যোগদান বা ধরে রাখার বোনাস, সরকার-স্পন্সরড ঋণ পরিশোধ সহায়তা এবং ‘স্থানান্তরযোগ্য প্রমাণপত্র’-এর জন্য টিউশন ফি-এর মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

‘স্থানান্তরযোগ্য প্রমাণপত্র’ বলতে এমন একটি ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট বোঝায় যা কর্মীর নির্দিষ্ট চাকরির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।

এই ক্ষেত্রে, কর্মীদের চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ের আগে চাকরি ছাড়লে, পরিশোধের পরিমাণ আনুপাতিক হারে কমবে। অর্থাৎ, কর্মী যদি যোগদানকালীন বোনাস পান এবং চুক্তির অর্ধেক সময় কাজ করার পরেই চাকরি ছেড়ে দেন, তাহলে তাঁকে অর্ধেক পরিমাণ অর্থ ফেরত দিতে হবে।

কর্মীদের এই বিষয়েও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যে, তারা চাইলে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী বোনাস শুরুতেই নিতে পারবে, সেক্ষেত্রে চাকরি ছাড়লে তাদের আর কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না।

ক্যালিফোর্নিয়া নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (California Nurses Association), যা এই ধরনের চুক্তির শিকার হওয়া কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে, এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

তাদের মতে, ‘স্টে-অর-পে’ চুক্তির মাধ্যমে কর্মীদের ওপর ঋণ পরিশোধের চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা তাদের ভালো বেতনের চাকরি বা উন্নত কর্মপরিবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।

এই নতুন আইনের ফলে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করা নিয়োগকর্তারা তাঁদের ‘স্টে-অর-পে’ চুক্তিগুলো কীভাবে তৈরি করবেন, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

তবে, ক্যালিফোর্নিয়ার এই পদক্ষেপ অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও অনুসরণ করা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, এমন কোনো চর্চা এখনো পর্যন্ত খুব একটা দেখা যায় না। তবে, কর্মীর অধিকার সুরক্ষায় শ্রম আইন ও বিধিমালা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *