ইউটিউবে খেলা দেখে, স্বপ্ন পূরণ! জাপানি তরুণের NFL-এ অসাধারণ জয়

জাপানের কিক-আর্টের যাদুকর: ইউটিউব থেকে উঠে আসা এক আমেরিকান ফুটবলের স্বপ্ন।

কানসেই মাতসুজাওয়া, ২৬ বছর বয়সী এক জাপানি তরুণ, যিনি কিনা ইউটিউব থেকে ফুটবল খেলা শিখে আজ বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনামে। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়া এই তরুণ সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ডের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোল করে সকলের নজর কেড়েছেন। তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম আর সীমাহীন জেদ।

জাপানের ইচিকাওয়ার বাসিন্দা কানসেইয়ের ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা রূপকথার চেয়ে কম নয়। ছোটবেলায় ভালো ফুটবল খেললেও, উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় পাশ করতে না পারায় জাপানে তার কলেজ জীবন শুরু হয়নি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফুটবল ম্যাচ দেখে তার স্বপ্ন আরও দৃঢ় হয়। সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে ইউটিউবকে হাতিয়ার করেন কানসেই।

কিভাবে একজন প্লেস-কিকারকে (placekicker) প্রস্তুত হতে হয়, সেই বিষয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে শুরু করেন তিনি।

শুরুর দিকে, কানসেইয়ের কোনো প্রশিক্ষক ছিল না। তাই ইউটিউবই ছিল তার শিক্ষক। তিনি বলেন, “আমি (সিয়াটেল) সিহক্সের কিকার জেসন মায়ার্সকে অনুসরণ করতাম। যদিও তার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি, তবে আমার জয়সূচক গোল করার পর তিনি ইনস্টাগ্রামে আমাকে মেসেজ করেছিলেন, যা আমার জন্য ছিল দারুণ এক পাওয়া। সেরা খেলোয়াড়দের অনুসরণ করে আমি নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছি।”

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ দলের সমন্বয়ক থমাস শেফিল্ডের মতে, কানসেইয়ের এই যাত্রা খুবই অনুপ্রেরণামূলক। তিনি বলেন, “নিজের চেষ্টায় ইউটিউব থেকে ফুটবল শিখে, ইংরেজি বলতে না পারা সত্ত্বেও অন্য একটি দেশে এসে নিজেকে প্রমাণ করা, সত্যিই অসাধারণ!”

অর্থনৈতিক দিক থেকেও কানসেইয়ের জীবন সহজ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে তিনি জাপানে একটি স্টেক হাউসে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন। এমনকি টাকা বাঁচানোর জন্য নিজের চুলও নিজেই কাটতেন। সুযোগের অপেক্ষায় তিনি তার খেলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করতেন। অবশেষে, ওহাইও’র হকিং কলেজ তাকে সেই সুযোগ দেয়।

হাওয়াইতে আসার আগে, হকিং কলেজে কাটানো সময় তার ইংরেজি উন্নত করতে সহায়তা করে। এরপর হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার পর কানসেইয়ের চোখে জল এসে গিয়েছিল।

কানসেই বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পাওয়াটা অনেক কঠিন। তবে কোচরা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আমার এবং আমার পরিবারের জন্য এটা ছিল দারুণ এক মুহূর্ত।”

শেফিল্ড আরও যোগ করেন, “আমি তাকে বলতে চেয়েছিলাম, ‘আরে, তোমার বাবা-মা তো এটা দেখছেন!’ একজন খেলোয়াড় কতটা কষ্ট করে, প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই পর্যন্ত আসে, তা দেখাটা আমার জন্য খুব আনন্দের ছিল।”

কানসেইয়ের মতে, তিনি জাপানি বেসবল তারকা শোহেই ওতানির দ্বারা অনুপ্রাণিত। তিনি বলেন, “আমি তার মানসিকতা এবং প্রস্তুতির ধরন দেখি। আমি যদি তার মতো হতে চাই, তাহলে একই মানসিকতা এবং প্রস্তুতি নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পারফর্ম করতে হবে।”

ভবিষ্যতে কানসেইয়ের স্বপ্ন এনএফএলে (NFL) খেলার। তিনি বলেন, “আমার অনেক স্বপ্ন আছে। তবে প্রথম দিন থেকেই আমি এনএফএলে খেলতে চাই, সুপার বোল জিততে চাই এবং ১০ বছর ধরে এনএফএলে খেলার পাশাপাশি বড় চুক্তি করতে চাই!”

ফুটবলে একজন প্লেস-কিকারের জয়সূচক গোল করার চাপ, যেন ক্রিকেটে শেষ ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর মতো। কানসেইয়ের এই অদম্য জেদ এবং ইউটিউব থেকে খেলা শিখে বিশ্ব জয় করার গল্প নিঃসন্দেহে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *