wall street-এর খারাপ ঋণের দুশ্চিন্তা: বাড়ছে? বড় ধাক্কা?

শেয়ার বাজারে মন্দ ঋণের আশঙ্কা বাড়ছে, উদ্বেগে বিনিয়োগকারীরা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওয়াল স্ট্রিটে, বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মন্দ ঋণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই উদ্বেগের মূল কারণ হলো, বেশ কিছু আর্থিক গোষ্ঠীর খারাপ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মন্দ ঋণ আসলে কী?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মন্দ ঋণ হলো এমন ঋণ যা পরিশোধিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন সেই ঋণকে মন্দ ঋণ হিসেবে ধরা হয়।

এই ধরনের ঋণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয় এবং বাজারের স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে তোলে।

জেফরিজ ফাইনান্সিয়াল গ্রুপের সমস্যা

শুরুতে, বিনিয়োগকারীদের প্রধান মনোযোগ ছিল জেফরিজ ফাইনান্সিয়াল গ্রুপের দিকে। এই ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকটির প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি, যেখানে ১ ডলার = ১১০ টাকা ধরা হয়েছে) মূল্যের ঋণ আটকে আছে ফার্স্ট ব্র্যান্ডস নামক একটি অটো পার্টস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে।

গত মাসে ফার্স্ট ব্র্যান্ডস দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করার পরই মূলত এই উদ্বেগের সূত্রপাত হয়।

অভিযোগ উঠেছে, ফার্স্ট ব্র্যান্ডস জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একই চালান (ইনভয়েস) একাধিকবার ব্যবহার করে ঋণ সংগ্রহ করেছে।

ফলে, জেফরিজের মতো ঋণদাতারা হয়তো পুরো বিষয়টি জানতে পারলে ঋণ দিতো না।

ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স এবং জাইন্স ব্যাংকর্পের পরিস্থিতি

এরপর, বিনিয়োগকারীদের নজর যায় দুটি আঞ্চলিক ব্যাংক, ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স ব্যাংকর্প ও জাইন্স ব্যাংকর্পের দিকে।

এই ব্যাংক দুটিও তাদের দেওয়া কিছু ঋণের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এই তিনটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম এক দিনে ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমে যায়।

জাইন্স ব্যাংকর্প জানিয়েছে, তারা প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার (৬৬০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতির শিকার হতে পারে।

ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, তারা ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে এবং তাদের আরও বেশি ঋণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।

বাজারের উপর প্রভাব

শেয়ার বাজারে এই অস্থিরতার কারণে, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

এর ফলস্বরূপ, ঐ দিন ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৬৫% কমে যায়।

সাধারণত, এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ, রুপা এবং সরকারি বন্ডের মতো নিরাপদ বিনিয়োগে অর্থ সরিয়ে নেয়।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

জেপি মরগান চেজ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন সতর্ক করে বলেছেন, “একটি তেলাপোকা দেখলে, সম্ভবত আরও অনেক আছে।”

তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আরও খারাপ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জেপি মরগানও কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়।

তাদেরও ট্রাইকালার নামক একটি দেউলিয়া হওয়া কোম্পানির কাছে ১৭০ মিলিয়ন ডলার (১৮৭০ কোটি টাকার বেশি) ঋণ আটকে আছে।

বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য

যুক্তরাষ্ট্রের এই আর্থিক সংকট সরাসরিভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তবে, বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হওয়া যেকোনো পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলে।

এর ফলে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিটেন্সের ওপরও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *