এআই: ডট-কমের থেকেও ১৭ গুণ বড়, ধ্বংসের ইঙ্গিত?

শেয়ার বাজার বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর বাজারে ফাটল ধরার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, এই মুহূর্তে এআইয়ের উন্মাদনা ১৯৯০ দশকের ডট-কম বুদ্বুদের চেয়ে ১৭ গুণ বড় হতে পারে।

এমনকি ২০০৮ সালের আবাসন বাজারের ধসের চেয়েও চারগুণ বড় ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন তারা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা ম্যাক্রোস্ট্র্যাটেজি পার্টনারশিপের গবেষক ও অংশীদার জুলিয়ান গ্যারান।

গ্যারানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রযুক্তি বিশ্বে পুঁজির ভুল ব্যবহারের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তার মতে, বৃহৎ ভাষার মডেল (লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা এলএলএম) ব্যবহার করে তৈরি হওয়া অ্যাপ্লিকেশন বা পরিষেবাগুলো বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

এর কারণ হিসেবে তিনি মডেলগুলোর সীমাবদ্ধতা, স্কেলিংয়ের সমস্যা এবং মুনাফা অর্জনে ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন।

গ্যারান মনে করেন, এই মুহূর্তে এআই প্রযুক্তি মূলত কিছু ‘বাজে’ কাজ প্রতিস্থাপন করছে, যা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে খুব একটা সাহায্য করবে না। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবস্থাপনার কিছু অংশ বা পরামর্শক সংস্থাগুলোর কথা বলা যেতে পারে, যেখানে কাজের সঠিকতা যাচাই করা হয় না।

তবে, এআইয়ের সমর্থকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে। তারা মনে করেন, যদি সত্যিই কোনো বুদ্বুদ তৈরি হয়ও, তবে ডট-কমের মতো এই প্রযুক্তিও আমাদের জন্য অ্যামাজনের মতো সফল কোম্পানি তৈরি করতে পারে এবং ইন্টারনেটকে আরও উন্নত করবে।

তবে, গ্যারান সতর্ক করে বলেছেন, এআই ইকোসিস্টেম সম্ভবত নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবে না। এনভিডিয়ার মতো কিছু কোম্পানি লাভজনক হলেও, ডেটা সেন্টার, এলএলএম ডেভেলপার এবং এলএলএম ব্যবহারকারী সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো এখনো ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।

এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন, যা মূলত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসে। কিন্তু লাভজনক হওয়ার কোনো সুস্পষ্ট উপায় এখনো দেখা যাচ্ছে না।

গ্যারান মনে করেন, বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে এআই স্টার্টআপগুলোতে অর্থ বিনিয়োগ করা কমিয়ে দিচ্ছেন, কারণ তাদের মূল্যায়ন অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে সফটব্যাংকের মতো বড় বিনিয়োগকারী এবং সৌদি আরবের মতো বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

যদিও অনেকেই মনে করছেন, এআইয়ের বাজার এখনো বাড়ছে, তবে গ্যারান বলছেন, খুব দ্রুতই এর পতন শুরু হতে পারে। তিনি মনে করেন, যদি তার এই বিশ্লেষণ ভুলও হয়, তাহলেও এআইয়ের কারণে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কারণ, এই খাতে বিনিয়োগ হওয়া অর্থ হয়তো এমন কিছু তৈরি করবে, যা সমাজের জন্য খুব একটা কাজে আসবে না।

সবশেষে, গ্যারান একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদি সত্যিই সুপার ইন্টেলিজেন্স তৈরি হয়, তবে হয়তো আমরা একটি সুন্দর পৃথিবীতে প্রবেশ করব, অথবা একটি ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের মুখোমুখি হব।

তবে, তার মতে, বর্তমান শিল্প সমাজের পক্ষে এটি অর্জন করা কঠিন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *