আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত নিরসনে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই দেশের প্রতিনিধিদল আলোচনা শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যাওয়ায় এই আলোচনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত কয়েকদিনে সীমান্তের উভয় পাশে ব্যাপক গোলাগুলিতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (গতকাল) দোহায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হল আফগানিস্তান থেকে আসা সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
বৈঠকে উভয় দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ করেছে। আফগানিস্তান সরকার তাদের দেশে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, সৌদি আরব এবং কাতারের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, এই অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পুনরায় মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এর আগে, দুই দেশের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি হয়, যা শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ হয়। এরপরই পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশের দুটি স্থানে হামলা চালিয়েছে। তাঁদের দাবি, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মির আলি শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার জবাব হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
পাকিস্তানি বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, আফগান কর্মকর্তারা বলছেন, হামলায় নারী, শিশুসহ অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তানে আসন্ন একটি সিরিজ বয়কট করেছে।
শনিবার পাকতিকায় নিহতদের জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। সেখানে শোকের আবহ তৈরি হয় এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর ‘বারবার অপরাধ’ এবং আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করেছেন।
তিনি একে ‘সংঘাত দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ২,৬১১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সীমান্ত রেখা রয়েছে, যা ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত। তবে আফগানিস্তান সরকার এই সীমান্তকে স্বীকৃতি দেয় না।
পাকিস্তান বর্তমানে আফগানিস্তান সংলগ্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ ও চির বৈরি দেশ ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করার অভিযোগও এনেছে, তবে তারা কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির আফগানদের প্রতি ‘সহিংসতা পরিহার করে পারস্পরিক নিরাপত্তা এবং প্রগতি’ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তালেবানকে অবশ্যই আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস