শিরোনাম: ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা: বিত্তবানদের পকেট ভরছে, ক্ষতি হচ্ছে সবার?
বর্তমান বিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে এর সুবিধাভোগীর সংখ্যাও। কিন্তু এই সুবিধাগুলো কাদের জন্য? সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের আকর্ষণীয় অফারগুলো মূলত উচ্চ-আয়ের গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। আর এর পেছনে যে খরচ হয়, তা বহন করতে হয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহক পর্যন্ত সকলকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো তাদের সবচেয়ে ধনী গ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয় অফার দিয়ে থাকে। যেমন, আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং জেপি মরগান চেজের মতো কোম্পানিগুলো তাদের প্রিমিয়াম কার্ডগুলোতে বিশেষ সুবিধা যোগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামেক্স প্ল্যাটিনাম কার্ড ব্যবহারকারীরা একটি আউরা রিং কেনার জন্য ২০০ ডলার পর্যন্ত ক্রেডিট পান, আবার চেজ স্যাফায়ার রিজার্ভ কার্ডের গ্রাহকরা বিলাসবহুল হোটেলে থাকার জন্য ৫০০ ডলার পর্যন্ত ছাড় পান। এছাড়াও, এই কার্ডগুলোতে বিমানবন্দর লাউঞ্জে প্রবেশের মতো আরও অনেক সুবিধা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই সুবিধাগুলোর কারণে কার্ডগুলোর বার্ষিক ফি বেড়েছে। অ্যামেক্স প্ল্যাটিনাম কার্ডের বার্ষিক ফি এখন ৮৯৫ ডলার, যেখানে স্যাফায়ার রিজার্ভের ফি ৭৯৫ ডলার। (১ ডলার = ১১০ টাকা ধরে হিসাব করলে, অ্যামেক্স প্ল্যাটিনাম কার্ডের বার্ষিক ফি প্রায় ৯৮,৪৫০ টাকা এবং স্যাফায়ার রিজার্ভের ফি ৮৭,৪৫০ টাকা।)
তবে কার্ড কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের হাজার হাজার ডলার সাশ্রয়ের যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তার পেছনে রয়েছে অন্য হিসাব। এই সুবিধাগুলো আসে মূলত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া ফি থেকে। কার্ড ব্যবহারের সময় ব্যবসায়ীদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘সোয়াইপ ফি’ দিতে হয়, যা ইন্টারচেঞ্জ ফি এবং অন্যান্য চার্জের সমন্বয়ে গঠিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই ফি’র হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। আর এই কারণেই কার্ড কোম্পানিগুলো এত আকর্ষণীয় অফার দিতে পারে। উচ্চ আয়ের গ্রাহকরা যখন বেশি করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তখন ব্যবসায়ীদের ওপর এই ফি’র বোঝা বাড়ে। ফলে ব্যবসায়ীরা হয় তাদের মুনাফা কমায়, না হয় পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়।
বোস্টন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জোয়ানা স্ট্যাভিনের গবেষণা অনুযায়ী, যারা নগদ বা ডেবিট কার্ডে পরিশোধ করেন, তারাও এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের সুবিধাভোগীদের ‘সাবসিডি’ দেন, কারণ তাদের একই দামে পণ্য কিনতে হয়, কিন্তু কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না।
পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলো তাদের ব্যয়ের একটি বড় অংশ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করে থাকে। এমনকি, কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এই ‘সোয়াইপ ফি’ প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কিছু আইন প্রণয়নের চেষ্টা করা হলেও, তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সমালোচকরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো একদিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ বার্ষিক ফি আদায় করে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও বেশি ফি নেয়। এই লাভজনক ব্যবসায়িক মডেলের কারণে উচ্চ আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে।
বিষয়টি যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যায়, এখানেও ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসারের ফলে ডিজিটাল লেনদেন সহজ হয়েছে, যা কার্ড ব্যবহারের প্রবণতাকে আরও উৎসাহিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে, উন্নত দেশগুলোর এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফি কাঠামো এবং সুবিধাগুলো আরও স্বচ্ছ ও গ্রাহক-বান্ধব করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া, ডিজিটাল লেনদেনের নিরাপত্তা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার দিকেও নজর দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন