মার্কিন মুলুকে মন্দা? চাকরি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক উদ্বেগ বাড়ছে: বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব ও বাংলাদেশের জন্য কিছু ইঙ্গিত।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপে কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে এই উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির দিকে তাকালে বাংলাদেশের জন্য কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকানরা বর্তমানে ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়া নিয়ে আগের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। গত বছরের অক্টোবর মাসে যেখানে ৩৭ শতাংশ মানুষ ভালো চাকরি পাওয়া নিয়ে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না, সেখানে এবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৭ শতাংশ।

জরিপে আরও উঠে এসেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, বাড়িভাড়া ও স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান খরচ অনেক পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ। এছাড়া বিদ্যুতের বিল এবং পেট্রোলের দামও তাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। এই বিষয়গুলো মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কালে নেওয়া কিছু নীতির ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যুতের বিল নিয়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ মার্কিনি গুরুতর উদ্বেগে রয়েছেন। এছাড়া, খাদ্যদ্রব্যের উচ্চ মূল্য নিয়ে ৫১ শতাংশ এবং আবাসনের খরচ নিয়ে ৪০ শতাংশ মানুষ আর্থিক চাপে আছেন।

এই জরিপ থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি-নির্ধারণের কারণে দেশটির অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে। যদিও দেশটির শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো দেখা যাচ্ছে, তবুও জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, নর্থ ক্যারোলাইনার বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী লিন্ডা উইভিল ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা তার চার্চ গ্রুপের জন্য চকোলেট-ঢাকা পেকান বাদামের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ইলিনয়ের ৫৮ বছর বয়সী কেভিন হ্যালসি বলেছেন, গ্রীষ্মকালে তার বিদ্যুতের বিল আগে যেখানে ৯০ ডলার ছিল, এখন তা বেড়ে ৩০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তিনি মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয় এবং এর উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই উদ্বেগ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা বা দুর্বলতা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যায়, বিশ্ব বাজারে খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লে তা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, বিশ্ব বাণিজ্য কমে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগের বিষয়। খাদ্যদ্রব্য, পরিবহন খরচ এবং জীবনযাত্রার অন্যান্য উপকরণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে। সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই জরিপ প্রমাণ করে যে, একটি দেশের অর্থনৈতিক নীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে, এটি বিশ্ব অর্থনীতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকেও তুলে ধরে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *