শিরোনাম: আমেরিকার স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণায় পরিবর্তন: বাড়ছে ‘প্রাকৃতিক’ উপাদানের প্রতি ঝোঁক, বাড়ছে উদ্বেগ
স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণা এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের এক নতুন চিত্র দেখা যাচ্ছে আমেরিকায়। সেখানে মানুষজন এখন তথাকথিত ‘প্রাকৃতিক’ উপাদানের দিকে ঝুঁকছেন, যা অনেক সময় প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে।
কোভিড-১৯ অতিমারীর পর থেকে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে, যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক এই নতুন ধারণার পেছনে কাজ করছে কিছু মূল বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস, ইন্টারনেটে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি, দ্রুত ফল লাভের আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে নিজেদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা।
আমেরিকার খাদ্য বিষয়ক ইতিহাসবিদ ড. কেন আলবালার মতে, স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণাগুলো যুগে যুগে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে এবং মানুষ সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। কেউ হয়তো মনে করেন, মাংস খেলেই স্বাস্থ্য ভালো থাকে, আবার কেউ শস্যের ওপর গুরুত্ব দেন।”
তবে, এই ধরনের ধারণাগুলো সব সময় সঠিক নয়।
অনেক সময় এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন, সেখানকার লোকজন এখন কাঁচা দুধ পান করা বা মাংস খাওয়ার মতো ‘প্রাকৃতিক’ ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কাঁচা দুধে এমন কিছু জীবাণু থাকতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় মানুষের গড় আয়ু অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কম।
দেশটির জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
এই পরিস্থিতিতে মানুষ যখন দ্রুত সমাধান পেতে চায়, তখন তারা ভুল পথে পা বাড়াতে পারে।
এই পরিবর্তনের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে।
একদিকে যেমন স্বাস্থ্য বীমা এবং স্বাস্থ্যখাতে মুনাফা করার প্রবণতা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, তেমনই তারা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
অনলাইনে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের সহজলভ্যতা একদিকে যেমন রোগীদের জন্য ভালো, তেমনই ভুল তথ্যের বিস্তারের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতারা দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন।
অনেক ক্ষেত্রে, এই পরামর্শদাতাদের কোনো ডাক্তারি শিক্ষা নেই, তবুও তারা তাদের মতামত জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
মানুষকে বোঝাতে হবে, ‘প্রাকৃতিক’ সব কিছুই যে নিরাপদ, তা নয়।
স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. জেসিকা স্টেইয়ারের মতে, স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল তথ্য প্রচার করা একটি বড় সমস্যা।
তিনি বলেন, “ওয়েলনেস ইন্ডাস্ট্রির কাজ হলো সহজ সমাধান দেওয়া, যা অনেক সময় জটিল বিষয়গুলোকে সরল করে উপস্থাপন করে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক জটিলতাগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করার পরিবর্তে, তারা এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বলে, যা অনুসরণ করা সহজ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে, তবে ভুল তথ্যের বিস্তার রোধ করতেও কাজ করতে হবে।
একইসঙ্গে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন