ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম জালিয়াতি: বিশ্বজুড়ে কীভাবে ফাঁদে পড়ছে মানুষ
ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের যুগে প্রতারণার নতুন কৌশল হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম (ATM) জালিয়াতি দ্রুত বাড়ছে। উন্নত প্রযুক্তি এবং আর্থিক লেনদেনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকেরা সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে।
সম্প্রতি, বিশ্বজুড়ে এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা বেড়েছে, যেখানে ভুক্তভোগীরা ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম-এর মাধ্যমে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ হারাচ্ছেন।
প্রকৃতপক্ষে, ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএমগুলো নগদ টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তর করার একটি মাধ্যম। প্রতারকরা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখাচ্ছে।
তারা গ্রাহকদের ফোন করে, নিজেদের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকের কর্মচারী বা পরিচিত কারো পরিচয় দিয়ে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (USA) ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (FBI)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম জালিয়াতির শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা) ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এই বছর ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতারকরা গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আকৃষ্ট করে। তারা প্রায়ই ভুক্তভোগীদের জানায় যে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বা তারা কোনো অপ্রত্যাশিত ভুলের শিকার হয়েছেন।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য তারা ভুক্তভোগীদের ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম-এ টাকা জমা দিতে বলে।
এই ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স্ক মানুষ এবং আর্থিক বিষয়ে কম অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই বেশি। প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের আবেগগতভাবে ব্ল্যাকমেইল করে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন স্ক্যামার (scammer) নিজেকে বিখ্যাত অভিনেতা জেসন মোমোয়ার (Jason Momoa) বন্ধু পরিচয় দিয়ে ফ্লোরিডার (Florida) এক নারীর কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম-এর মাধ্যমে প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা) হাতিয়ে নেয়।
আরেকটি ঘটনায়, একজন প্রতারক নিজেকে একটি ব্যাংকের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে সত্তরের দশকের এক বৃদ্ধাকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম-এ ১৩০,০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা) জমা করতে প্ররোচিত করে।
প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে। এছাড়াও, তারা ভুয়া বিল, ওয়েবসাইট এবং সরকারি নথিপত্র ব্যবহার করে থাকে।
এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোন কল বা ইমেলের (email) মাধ্যমে পাওয়া কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বা আর্থিক লেনদেন করার আগে ভালোভাবে যাচাই করুন। কোনো সন্দেহজনক ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং এটিএম প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে আরও বেশি জানার মাধ্যমে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
মনে রাখবেন, কোনো অফার (offer) যদি সত্যি হওয়ার মতো ভালো হয়, তবে সম্ভবত সেটি সত্যি নয়। আপনার সামান্য অসতর্কতা আপনাকে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন (CNN)