এশীয় বাজারে শেয়ারের উল্লম্ফন! চীন সহ বিভিন্ন দেশের শেয়ারের দাম বাড়ল

এশীয় শেয়ার বাজারে মঙ্গলবার ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, যেখানে জাপানের বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে, জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি বাজার-বান্ধব নীতি গ্রহণ করতে পারেন। একইসাথে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনাও বাজারের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জাপানের প্রধান শেয়ার সূচক, নিক্কেই ২২৫, দিনের শুরুতে ভালো অবস্থানে থাকলেও পরে সামান্য কমে যায় এবং ০.৩ শতাংশ বেড়ে ৪৯,৩১৬.০৬ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি নির্বাচিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, তিনি সুদের হার কম রাখা এবং সরকারি ব্যয় বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নিতে পারেন। এর ফলে ইয়েন-এর (Yen) বিপরীতে ডলারের (Dollar) মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১.২ শতাংশ এবং সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১.৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে আসন্ন বৈঠকের সম্ভাবনা উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে সহায়ক হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক ০.২ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এসএন্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.৭ শতাংশ বেড়েছে। তাইওয়ানের তাইএক্স সূচকও সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে, সোমবার মার্কিন শেয়ার বাজারেও বেশ ভালো উন্নতি দেখা গেছে। এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ১.১ শতাংশ বেড়েছে, যা এর আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এছাড়া, ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ১.১ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক ১.৪ শতাংশ বেড়েছে। অ্যাপলের শেয়ারের দাম ৩.৯ শতাংশ বেড়েছে, যা তাদের নতুন আইফোন মডেলের চাহিদার ইঙ্গিত দেয়।

এই বাজারের উন্নতির কারণ হিসেবে বিভিন্ন বিষয়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ইস্পাত কোম্পানি ক্লিভল্যান্ড-ক্লিফসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ঘোষণা। তিনি বলেছেন, একটি বড় বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনকারীর সঙ্গে তাদের সম্ভাব্য চুক্তি হতে চলেছে, যা ভবিষ্যতে কোম্পানির মুনাফা বাড়াতে পারে। এছাড়া, কোম্পানিটি মিশিগান এবং মিনেসোটা রাজ্যে বিরল মৃত্তিকা (rare earths) খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছে।

তবে, বাজারের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, অ্যামাজনের ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবাতে (cloud computing service) বিভ্রাটের কারণে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সমস্যা হয়েছে। এছাড়াও, আগামী দিনগুলোতে কোকা-কোলা, টেসলা এবং প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মতো বড় কোম্পানির আয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে। বাজারে এখন কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ানোর দিকে নজর রয়েছে, কারণ এপ্রিল মাস থেকে এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ (government shutdown) হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের (Federal Reserve) জন্য সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ সম্ভবত আরও কয়েকবার সুদের হার কমানোর কথা ভাবছে, তবে এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির তথ্যও দেরিতে প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের (crude oil) দাম সামান্য বেড়েছে। প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল প্রায় ৫৭.০৬ মার্কিন ডলার এবং ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৬১.০৫ মার্কিন ডলার। ইউরোর দর পতন হয়ে ১.১৬৩৩ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।

তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *