শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, প্রযুক্তি খাতের শেয়ার বিক্রির চাপে এশীয় শেয়ার সূচকের পতন
আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার মধ্যে বুধবার এশীয় শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে। প্রযুক্তি খাতের শেয়ার বিক্রির চাপ এর অন্যতম কারণ।
ওয়াল স্ট্রিটে দিনটি খুব একটা ভালো না কাটায় এর প্রভাব পড়েছে এশীয় বাজারে।
জাপানের শেয়ার বাজার প্রায় স্থিতিশীল ছিল। দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক নিক্কেই ২২৫ সামান্য উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে দিন শেষে সামান্য কমে ৪৯,৩০৭.৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির শেয়ারের দর পতনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সফটব্যাঙ্ক গ্রুপের শেয়ারের দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৫,৮১৯.১০ পয়েন্টে। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচকও ০.১ শতাংশ কমে ৩,৯১৪.৯৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
জাপানের রপ্তানি তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে দেশটির রপ্তানি বেড়েছে ৪.২ শতাংশ। এশিয়ার দেশগুলোতে শক্তিশালী রপ্তানি হওয়ায় এই বৃদ্ধি হয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১৩ শতাংশ কমেছে।
মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জাপানের গাড়ি রপ্তানিও প্রায় ২৪ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.৭ শতাংশ কমে ৯,০৩০.০০ পয়েন্টে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ১.৬ শতাংশ বেড়ে ৩,৮৮৩.৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মঙ্গলবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সামান্য বেড়েছে, তবে তা মাসের শুরুতে তৈরি হওয়া সর্বোচ্চ সীমা থেকে সামান্য নিচে ছিল।
ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ নতুন রেকর্ড গড়েছে। তবে প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক কম্পোজিট ০.২ শতাংশ কমেছে।
কিছু কোম্পানির ভালো ফল দেখা গেছে। জেনারেল মোটরস (General Motors) তাদের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল প্রকাশ করার পরে ১৫.১ শতাংশ বেড়েছে।
ওয়ার্নার ব্রোস. ডিসকভারি (Warner Bros. Discovery) কোম্পানি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লাভজনক হতে পারে এমন কিছু বিকল্প বিবেচনা করার কথা জানানোর পর ১০.৯ শতাংশ লাফিয়েছে।
তবে, প্রযুক্তি খাতের কিছু বড় কোম্পানির শেয়ারের দরপতন বাজারকে কিছুটা চাপে ফেলেছে।
গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ কমেছে, যা এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।
ব্রডকমের শেয়ারও ২ শতাংশ কমেছে।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা এমন এক সময়ে দেখা যাচ্ছে যখন কোম্পানিগুলোর মুনাফা প্রদর্শনের উপর চাপ বাড়ছে।
এপ্রিল মাস থেকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারের উচ্চমূল্য ধরে রাখতে হলে কোম্পানিগুলোকে মুনাফা বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শাটডাউনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
তারা এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কম কর্মসংস্থানের মধ্যে কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।
শুক্রবার, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ গ্রাহক মূল্য সূচক (consumer prices report) প্রকাশ করবে।
এটি ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
অন্যান্য বাজারে বুধবার সোনার দাম ১.১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪,১৫২.৭০ ডলারে (প্রায় ৪৫,৬৭৯ টাকা) দাঁড়িয়েছে।
অপরিশোধিত তেলের দামও বেড়েছে।
বেঞ্চমার্ক ইউএস ক্রুড অয়েলের দাম ১.১৮ ডলার বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৫৮.৪২ ডলারে (প্রায় ৬,৪০০ টাকা) এবং আন্তর্জাতিক বাজার মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১.২৩ ডলার বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৬২.৫৫ ডলারে (প্রায় ৬,৮৮০ টাকা) পৌঁছেছে।
ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর কমেছে, ইউরোর সামান্য উত্থান হয়েছে।
এই বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়।
বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনগুলো আমদানি-রপ্তানি খরচ, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস